ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার পথ আরো মসৃণ হয়েছে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলটির নেতারা বলছেন, এই সফরের মধ্যদিয়ে মানুষের মাঝে নতুন আশা জেগেছে।
‘আবার আসিব ফিরে/ধানসিঁড়িটির তীরে/এই বাংলায়’—জীবনানন্দ দাশের এই কবিতার মাধ্যেমে বাংলাদেশে আবার ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করে দু’দিনের বাংলাদেশ সফর শেষ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রোববার (০৭ জুন) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে শনিবার (০৬ জুন) সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি।
দু’দিনের সরকারি সফরে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। বিদায়ের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঘণ্টাব্যাপী হৃদয়জুড়ানো ও মন্ত্রমুগ্ধকর বক্তৃতা ছিল উল্লেখ করার মত।
এরআগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, বিএনপি চেয়ারপারসন, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, এফবিসিসআই নেতাদেরর সঙ্গে বৈঠক এবং স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু যাদুঘর, রামকৃষ্ণ মিশন ও ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন।
মোদির এই সফর ঘিরে ভারত ও বাংলাদেশিদের সঙ্গে প্রতিবেশিসহ বিশ্বর মোড়ল দেশগুলোর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। মোদি নিজেও বলেছেন, ‘আমার এই সফরকে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে’।
মোদির এই সফরকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক জন্মগত, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যের। বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের। নরেন্দ্র মোদির এই সফরে তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। এই সফরে দু’দেশের মৈত্রী-সম্পর্ক চিরস্থায়ী ও শক্তিশালি হয়েছে।
পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে আগামীদিনে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই সফরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এর আগে ভারত বিরোধীতার নামে সমস্যা সমাধান না করে জিইয়ে রাখার প্রবণতাও স্পষ্ট হয়েছে।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, অতীতে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোর যেভাবে সমাধান হয়েছে তিস্তাও একইভাবে সমাধান হবে। এই সরকারের নেতৃত্বে গঙ্গা ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। এই সফরে দু’দেশের মধ্যকার আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হওয়ায় আমরা আশা করছি, তিস্তা চুক্তিও বাস্তবায়ন হবে। মোদির কণ্ঠেও এর ইতিবাচক বার্তা ছিল বলে উল্লখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, বাংলাদেশের দিক থেকে এটি একটি সফল সফর। আমরা সবসময়েই কানেক্টিটিভিটির উপর জোর দিয়েছি। বাংলাদেশ এর মাধ্যমে বিরাট লাভবান হবে। তিস্তার ব্যাপার ছাড়াও বাস রুট নির্দিষ্ট করাসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে অনেকগুলো বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। বিশেষ করে বাংলাদেশে যে ভরত বিরোধী রাজনীতি অযৌক্তিক ছিল, সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। আমরা যারা সস্ত্রাসবাদ বিরোধী ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করি তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কত গভীর প্রমাণ হলো। আমাদের মধ্যকার মানবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করলো।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক হয়েছে, সে সম্পর্ক আরও অটুট হলে। প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ যেমন দেশের উন্নয়ন চায়, ভারতও বাংলাদেশের উন্নয়ন চায়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নতুন আশা জেগেছে।
১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই
মোদির এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল ও দুই রুটে বাস চলাচলের বিষয়ে চারটি চুক্তিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ভারতের জীবন বিমা কোম্পানির (এলআইসি) কার্যক্রম শুরুর জন্য বাংলাদেশের বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার (আইডিআরএ) পক্ষ থেকে সম্মতিপত্র হস্তান্তর করা হয়।
৬ চুক্তি ও প্রটোকল; এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি (নবায়ন), উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌ ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল (নবায়ন), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডসের (বিআইএস) মধ্যে মান নির্ধারণের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস চলাচলে দুটি চুক্তি ও প্রটোকল।
১৩ এমওইউ ও আধা সরকারি এমওইউ; ভারত-বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের মধ্যে সমঝোতা, মানবপাচার প্রতিরোধের বিষয়ে, পাচার ও জাল নোটের বিস্তার প্রতিরোধ, ২০০ কোটি ডলারের ভারতীয় নতুন ঋণচুক্তির বিষয়ে সমঝোতা, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে ব্লু ইকোনমি ও সমুদ্রসীমা বিষয়ে সমঝোতা এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার নিয়ে সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে।
সমঝোতা চুক্তিগুলোর আরো রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সার্কের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ভারতীয় সহায়তার (আইইসিসি) অধীনে প্রকল্প, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, ২০১৫-১৭ সালের জন্য সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি, বাংলাদেশ-ভারত শিক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে সম্মতিপত্র।
আখাউড়ায় ইন্টারনেটের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথ ইজারার বিষয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসএনএল) ও ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মধ্যে সমঝোতা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নয়া দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
যৌথ উদ্যোগে বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগ এবং কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইন্ডিয়ার মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৫
এসইউজে/এসএইচ