ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সমন্বয়হীন ও নেতৃত্বশূন্য জবি ছাত্রদল

ইমরান আহমেদ, জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৫
সমন্বয়হীন ও নেতৃত্বশূন্য জবি ছাত্রদল

জবি: নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়হীনতা আর রাজনীতি ছেড়ে ‘সুপার ফাইভ’ কমিটির সাংসারিক ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদল।

সাংগঠনিক কমান্ড না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কর্মীরা।

এছাড়া সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সুপার ফাইভ কমিটির নেতারা অংশ না নেওয়ায় কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে। আবার অনেকেই পুরাতন এ কমিটির নেতৃত্ব মানতেও নারাজ।
 
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ০৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষবর্ষের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ সজলকে সভাপতি ও ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে সুপার ফাইভ কমিটি গঠিত হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষবর্ষের ছাত্র যথাক্রমে রাজীব রহমান ও খন্দকার আল আশরাফ মামুনের নাম ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এসএম মহসিন বিশ্বাসকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
 
একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সমন্বয়হীনতার অভাবে সুপার ফাইভ কমিটির নেতাদের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ডে একসঙ্গে দেখা যায়নি। চলতি বছর ০৫ জানুয়ারির আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদাভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেও বাকি ‍তিনজনের কাউকেই অংশ নিতে দেখা যায়নি।

২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করে সংসার শুরু করেন সভাপতি ফয়সাল আহমেদ সজল। এ কারণে সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধে তার দেখা পাননি কর্মীরা। তবে মাঝে মধ্যে ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে থাকেন।

গত ৩০ এপ্রিল তিনি এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এ মুহূর্ত হতে বিএনপি’র উচিত হরতাল-অবরোধ, মিছিল-মিটিং বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট একটা সময় দিয়ে বিএনপিসহ সকল অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে ঢাকা বিভাগ কেন্দ্রিক অন্তত মহানগর কেন্দ্রিক সকল কমিটি পুনর্গঠন করা। সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের মহানগর, থানা, ওয়ার্ডসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের কমিটি গঠন অত্যন্ত জরুরি। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুপারিশ আমলে না নিয়ে অবশ্যই ত্যাগ, পরিশ্রম, হামলা, মামলা, নির্যাতনকে প্রাধান্য দিয়ে, সেই সাথে কর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি করা উচিত, কোনো নেতার মতামতে নয়। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ। ’
 
গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটির নির্বাচন নিয়ে স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়া ছিল বিএনপি’র বড় ভুল। আমার এ মন্তব্যের যারা বিরোধিতা করেছিলেন তাদের কাছে আজ প্রশ্ন- কী পেলেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে? যারা বিএনপিকে ভোটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা আসলে সরকারের লোক। আন্দোলন থেকে সরানোর জন্যই নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা। ’
 
সজল সমালোচনা করেছেন নিজের দলেরও। ০৭ এপ্রিল তার এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আর কত ভুল করবে বিএনপি? আর কত কর্মীর জীবনের বিনিময়ে খেসারত দিতে হবে নিতীনির্ধারকদের ভুল সিদ্ধান্তের। মিন্টু পুত্রের জামানত বাজেয়াপ্ত হলে জীবন দেওয়া ছাড়া কী করার থাকবে কর্মীদের?’

তবে দল ও দলের নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে এমন সমালোচনা এবং নিজ শাখার সাংগঠনিক সমন্বয়হীনতার কারণ জানতে তাকে বারবার ফোন করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
 
এদিকে, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না নিজের অনুসারীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে সরব থাকলেও অর্ধশতাধিক মামলার বোঝা নিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থাকছেন অধিকাংশ সময়। বাকি নেতাদের মধ্যে সহ-সভাপতি রাজীব রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিয়ে করে সংসার এবং ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন। এদিকে যুগ্ম সম্পাদক খন্দকার আল-আশরাফ মামুন বাংলাবাজারে বইয়ের ব্যবসা করছেন।  
 
জবি ছাত্রলদের এমন সমন্বয়হীতার কথা স্বীকার করেছেন শাখা সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না।

মুন্না বলেন, আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। বাকি নেতাদেরও জানিয়েছি। তারা আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তারা তাদের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
 
সংগঠনের নেতাদের বিয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংগঠনিক দুর্বলতার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। যারা সংসার আর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, তাদের কাছ থেকে ভাল সাংগঠনিক নেতৃত্ব আশা করা যায় না। সংগঠনের এমন অবস্থার কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের বলেছি ‘ভাইয়ের’ নেতৃত্ব না দিয়ে দলের ত্যাগী নেতাদের দিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করুন। দলের জন্য যোগ্য মনে না হলে আমাকেও বাদ দেওয়ার অনুরোধ করেছি তাদের। তারাও (কেন্দ্রীয় কমিটি) এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করছেন। আশা করি, শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসবে।
 
এদিকে, নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে কর্মীদের মধ্যে। সংগঠনের এমন নাজুক অবস্থার জন্য সুপার ফাইভ নেতাদের দায়ী করছেন কর্মীরা। অনেকেই আর তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারছেন না। তাদের কথা, ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলের কমিটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে করা হোক।

ছাত্রদলকর্মী ওমর ফারুক কাওসার বলেন, সুপার ফাইভের অনেকেই দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে কর্মীরা আন্তরিক থাকলেও নেতাদের সমন্বয়হীনতায় সঙ্কট বাড়ছে। অন্তঃকোন্দল ও সাংগঠনিক দুর্বলতায় ছাত্রদলের সমন্বয়হীনতা দিন দিন বাড়ছে।
 
ছাত্রদল কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী এম এ মান্নান বলেন, একযুগ আগে যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তাদের দিয়ে জবি ছাত্রদল চলতে পারে না। জবি ছাত্রদলকে পুনর্জীবিত করতে হলে প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আর ত্যাগী কর্মী।

একই কথা শোনা গেল ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী আবুল খায়ের ফরাজি, জাকির হোসেন উজ্জ্বল, শরিফ, সালাউদ্দিন ও মিঠুর বক্তব্যে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৫
আইএএ/এসএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।