ঢাকা: ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো দিক আছে, কিছু খারাপ দিক আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ হাতাশ।
মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদের মিডিয়া সেন্টারে বাজেটত্তোর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধি ধারা হয়েছে সাত শতাংশ। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে না পারলে এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয় বলে জানান রওশন এরশাদ।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন, স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন। তাই সীমিত আয়ের মধ্যেও এতো বড় আকারের বাজেট দিতে পেরেছেন।
বিরোধীদলীয় এ নেতা বলেন, বাজেট জনগণের জন্য, সেই বাজেট যদি জনকল্যাণে কাজ না করে তাহলে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে আমরা এর সমালোচনা করবো।
সরকারি চাকরীজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারি চাকরীজীবীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো দেওয়া হলো। এতে সরকারি চাকরীজীবীদের বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দ্রব্যের মূল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। বাড়বে জিনিসপত্রের দাম। এতে ভুক্তভোগী হবেন সাধারণ মানুষ। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো দিক নির্দেশনা নেই। শুধু কতগুলো কাগজের নোট ছাপালেই তো হবে না? এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।
মোবাইল কলের ওপর অতিরিক্তি চার্জ আরোপের সমালোচনা করে রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের প্রয়োজনী যোগাযোগর জন্য মোবাইলে কথা বলতে হয়। এখন থেকে ১০০টা রিচার্জ করলে ২০ টাকা ‘কর’ দিতে হচ্ছে। এই ‘কর’ না বাড়ালে কি হতো?
স্বাধীনতা পরবর্তী পোশাক শিল্প ব্যতিত নতুন কোনো শিল্প-কারখানা তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, প্রত্যেক সরকারই জনগণের কল্যাণ চাই, জনগণের জন্য কাজ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই নতুন করে কোনো শিল্প-কারখানা সৃষ্টি করতে পারেনি। শুধুমাত্র পোশাক শিল্প ছাড়া। নতুন শিল্প-কারখান সৃষ্টি না হওয়ায়, হয়নি কর্মসংস্থানের সুযোগ। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে বাজেট বাস্তবায়ন কখনই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, দেশের কর্মসংস্থান না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ বিদেশে যাচ্ছে। মানবপাচারের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তিনি বেসরকারি বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে কোনো কল্যাণই সম্ভব হবে না। দেশের পরিস্থিতি বেসরকারি বিনিয়োগ বান্ধব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে-বিদেশি বিনিয়োগও কমে গেছে। এর জন্য প্রতি বছর রাজনৈতিক অস্থিরতাকেই দায়ী করছেন রওশন। তাই সরকারের উচিত নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী সরকার বাজেট দিয়ে বাজেট পাস করিয়ে নিবে। কিন্তু সেই বাজেট কতটুকু জনকল্যাণে কাজ করবে তাও আমাদের ভাবতে হবে।
গত অর্থ বছরের অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়নি বলে সমালোচনা করে তিনি বলেন, গত অর্থ বছরের অনেকগুলো প্রকল্প আছে, যে গুলোর কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও হয়তো তাই হবে।
এ সময় তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে রোড চারলেন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০১০ সালে এসব হাইওয়ে চারলেন, ছয়লেন করার কথা ছিল, তা এখনও হয়নি। এভাবে কাজ চলতে থাকলে কীভাবে উন্নয়ন হবে?
ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনার সুপারিশ করে বলেন, আমাদের অনেক বেসরকারি বিনিয়োগকারী আছেন, যারা শুধুমাত্র ব্যাংক সুদের কারণে বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। ব্যাংক সুদের হার ৮/৯ শতাংশে আনার প্রস্তাব করেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতার বাজেটত্তোর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, নুরুল ইসলাম ওমর, ফখরুল ইমাম, সেলিম উদ্দিনসহ দলের অন্য নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৫, (আপডেট: ১৩২৭)
এসএম/টিআই