ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

মোদি দর্শনের পর নীরব বিএনপি!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
মোদি দর্শনের পর নীরব বিএনপি! ফাইল ফটো

ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের পর আর কোনো নড়াচড়া নেই বিএনপিতে। আপাতত নীরব অবস্থানে রয়েছে দলটি।



বৈঠকের পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও মোদির সফর এবং খালেদা-মোদির বৈঠক নিয়ে কোনো মূল্যায়ন সভা হয়নি বিএনপিতে। মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম এমনকি পাঁচ সদস্য’র যে প্রতিনিধি দল নিয়ে হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গেও আর একত্রে বসেননি খালেদা জিয়া। গত তিন দিন গুলশান কার্যালয়ে অফিস করলেও ড. মঈন খান ছাড়া বাকি চার জনের কাউকেই ডাকেননি তিনি।

বিষয়টিকে কেউ কেউ রহস্যজনক বলার চেষ্টা করলেও বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলছেন- এখন থেকে সব কিছুই ভেবে চিন্তে করা হবে। অতীতের মতো হুট-হাট করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করা যাবে না। আগে-পিছে না ভেবে কাজ করতে গিয়ে আর ‘ধরা’ খাওয়া চলবে না।

অবশ্য আরেকটি অংশের মতে, মোদির দর্শন পেয়েই খুশি বিএনপির কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা। মোদি-খালেদার বৈঠককে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য মনে করছেন তারা। ভারতের সরকার প্রধানের সঙ্গে বিএনপি প্রধানের বৈঠকের ‘সুযোগ’ আপাতত তাদের কাছে বড় অর্জন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরও সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক করাতে পেরেই খুশি তারা। ফলে মোদির সফর থেকে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি নিয়ে আপাতত কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের।

এ কারণেই মোদি সফরে ৬৫ দফার যৌথ ঘোষণা এবং চুক্তিসহ ২২টি দলিলে উল্লেখিত দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে  আপাতত ভারতের লাভবান হওয়ার খবর এবং বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর পানি চুক্তি না হওয়ার পরও মুখে কুলুপ এঁটেছে বিএনপির কূটনৈতিক কোর। এ কোরের ‘আপাত’ প্রধান ড. আব্দুল মঈন খান ‘চমৎকার আলোচনা’! ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এ করডিয়াল অ্যাটমসফিয়ার’- বলেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন।

সূত্র জানায়, মোদির সঙ্গে দেখা করতে পেরে প্রথম দিকে খুব প্রফুল্ল ছিলেন খালেদা জিয়া এবং বিএনপির কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির ‘জনভাষণ’-এ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় ড. আব্দুল মঈন খানদের সেই ‘প্রফুল্ল’ ভাব উধাও হয়ে যায়। ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’ তত্ত্বের কোনো সুরাহা’র আভাস মোদির ভাষণে না থাকায় যথারীতি ‘মুখে হাসি-বুকে জ্বালা’ নিয়েই থাকতে হয় বিএনপি নেতাদের।  

ফলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়নের চেয়ে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়নের ‘নালিশ’ করেও এগুলো প্রতিকারের তাৎক্ষণিক আশ্বাস না পাওয়ার ফলে বিএনপির উদ্বেগ আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে।

দলটির নেতারা মনে করছেন, বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে ভারতের নৈতিক অবস্থান একটুও বদলায়নি। অন্তত যৌথ ঘোষণা এবং মোদির ‘জনভাষণ’-এ তেমনটি মনে হয়েছে।

অবশ্য বিএনপির কূটনৈতিক কোরের নেতারা বলছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সংকটের ব্যাপারে ভারতের নৈতিক অবস্থান পরিষ্কার হতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিএনপির ‘নাশিল’-এর বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকারকে কোনো বার্তা দিয়েছেন কি না, তা বুঝতেও কিছুটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, আগামী দিনগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আচরণ কী হয়, তা দেখেই বোঝা যাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কী ধরনের বার্তা পেয়েছে তারা।

সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই মোদির সফর নিয়ে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন। বরং তিস্তা নদীর পানি চুক্তি না হওয়ায় শেখ হাসিনার সরকাকেই দুষছে বিএনপি। মঙ্গলবার (৯ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেছেন, সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও অযোগ্যতা-অদক্ষতার কারণে মোদির সফরে তিস্তার নদীর পানি চুক্তি হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কথা বলার জন্য দলের সিলেক্টেড পারসন আমি নই।

পরে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কূটনৈতিক কোরের নেতৃত্বে থাকা ড. আব্দুল মঈন খানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, হ য ব র ল অবস্থার মধ্যে দলে হঠাৎ গুরুত্ব পাওয়া ড. আব্দুল মঈন খান পছন্দের কয়েকটি মিডিয়ার সাংবাদিক ছাড়া কথা বলেন না।

তবে মোদি-খালেদা বৈঠক এবং মোদির বাংলাদেশ সফর পরবর্তী বিএনপির মূল্যায়ন জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলো বিএনপি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও বিএনপি চেয়ারপারসনকে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন। তবে খালেদা-মোদির বৈঠকের পর বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আশা করি দ্রুতই হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।