ঢাকা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট (মূসক) আরোপের ফলে উচ্চশিক্ষায় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পথ রুদ্ধ হয়ে এ শিক্ষা ধনিকশ্রেণীর হাতে চলে যাবে বলে দাবি করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।
শনিবার (১৩ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
ঘোষিত বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও এমপিওভুক্ত কলেজের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী বলেন, ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব ইউজিসির তৈরি করা ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রের প্রথম ধাপ। শিক্ষার্থীদের ভাবার সময় এসেছে যে তারা কি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য এসেছে নাকি ভ্যাট দিয়ে উচ্চশিক্ষা নামক পণ্য কিনতে এসেছে।
তিনি বলেন, ভ্যাট দিয়ে শিক্ষা কিনে নেওয়ার আগে নির্ধারণ করতে হবে তারা ‘শিক্ষার্থী’ না ‘ক্রেতা’। উপলদ্ধি করতে হবে, শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, অধিকার।
জ্যোর্তিময় বলেন, ভ্যাট প্রস্তাব করা হয়েছে, পাস হয়নি। এর আগেই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ভ্যাটসহ ফি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এমন নোটিশ দিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় ট্রাস্টি বোর্ডগুলো শিক্ষার পণ্যায়নের দৃষ্টিভঙ্গি। যেখানে সরকারের কোনো তদারকি নেই।
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বাজেটের আগে যেমন পণ্যের দাম বাড়ে। তেমনি শিক্ষার দাম বাড়িয়ে শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে।
জ্যোতির্ময় অভিযোগ করে বলেন, সরকার ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সাড়ে চার শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের ফলে সরকার তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ফের ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব ঘৃণ্য কৌশল।
উচ্চশিক্ষাকে পণ্য না বানাতে ভ্যাট প্রত্যাহার, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন নীতিমালা, ক্রেডিট টিউশন ফি নিম্ন ও ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘উচ্চশিক্ষার সংকট: প্রেক্ষাপট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষ এক গবেষণা করা হয়।
ফলাফল তুলে ধরে জ্যোর্তিময় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নের নামে শিক্ষার্থী ফি গ্রহণ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতারণামূলক জলঘোলা করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ আইন ও ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডকে মুনাফা লাভের সুযোগ করে দিয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে ব্যয় করে না বললেই চলে। ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় এ খাতে গড়ে দু’ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যয়ই করেনি। আইনের ৩৬ ধারা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ সেল থাকার কথা বলা হলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নেই।
আগামী ১৫ জুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারপত্র বিলি ও ক্যাম্পাসে সভা, ১৭-১৮ জুন ধানমন্ডি, বনানীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিলানী শুভ, ঢাবি সংসদের সভাপতি লিটন নন্দী, ঢাকা মহানগর সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৫
আরইউ/এএ