বগুড়া থেকে: সারা দেশে একচেটিয়া বাজার দখলে রেখেছে আড়াই যুগ আগে গড়ে ওঠা বগুড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফাউন্ড্রি শিল্প। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সবখানেই বগুড়ার বিভিন্ন পল্লীর কারখানায় উৎপাদিত সামগ্রীর আধিপত্য।
ফাউন্ড্রি ও ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপগুলোতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কাস্ট আয়রন ও স্টিলের তৈরি সেচ পাম্প, পাম্পের যন্ত্রাংশ, নলকূপ, লায়নার-পিস্টনসহ কৃষি যন্ত্রাংশ, ডিজেল ইঞ্জিন, পাওয়ার টিলার, সুগার মিল ও স’মিলের যন্ত্রাংশ এক নামে চেনে সবাই।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড থেকে লেদ মেশিন আমদানি করা ছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ স্থাপনের কথা ভাবাই যেতো না। সময়ের ব্যবধানে এখন বগুড়ায় পুর্ণাঙ্গ লেদ মেশিন তৈরি করা হচ্ছে। যা দিয়ে ঘটেছে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের বিকাশ।
সরিষার তেলকলের ঘানি, সেমাই মেশিন, আখ মাড়াই যন্ত্র, ইটভাটায় ব্যবহৃত মল্ডিং, খোয়া-সিমেন্ট-বালু মেশানোর মিকচার মেশিন, শ্যালো মেশিনচালিত নৌকা ও ভটভটি, রিকশা-ভ্যান তৈরির যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি তৈরি করছে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানের কারিগরি পল্লী।
দেশে এক সময় মিলনার্স কোম্পানির কেএসবি এবং ফার্ম ল্যান্ডের সেচ পাম্পের একচেটিয়া বাজার ছিল। প্রায় ৩০ বছর আগে এসব পাম্প দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হতো। বোরো মৌসুমে ফসলের ক্ষেতে প্রচুর সেচের প্রয়োজনে ঢাকার ওই দুই শিল্পপ্রতিষ্ঠান সেচ পাম্প বিক্রির নামে কৃষকদের মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো। তখন স্থানীয় কারিগররা এই সেচযন্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেন।
কোনো একাডেমিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই কারিগররা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঢালাই কারখানা গড়ে তোলেন। একে একে সিন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্পে নানা মাপের পাম্প, ডিজেল ইঞ্জিনের লায়নার-পিস্টন উৎপাদন শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বগুড়ায় উৎপাদিত মিলটন, এসআর, বাশার, মদিনা, আজাদ পাম্পসহ বিভিন্ন কারখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার পাম্প তৈরি হচ্ছে, যা কৃষকরা সহজেই কিনতে পারছেন কম মূল্যে।
উৎপাদনকারীরা জানান, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর দক্ষিণের সাথে উত্তরের সংযোগের মাধ্যমে এসব পণ্য দ্রুত সারা দেশের বাজার দখল করে নেয়। এসব উন্নতমানের পাম্প দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতেও চলে যাচ্ছে।
ফাউন্ড্রি ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে বগুড়ার ভূমিকার বিষয়টি সরকারের নজরে এলে এই শিল্পের বিকাশে সরকার ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে ধোলাইখাল মডেল প্রকল্প গ্রহণ করে।
গোহাইল রোডের আমির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিপিয়ারিংয়ের কারিগর সাগর বলেন, উরুলিয়া থেকে ঢালাই পাম্ম কিনে তারা ফেনিশিং করে বিক্রি করেন। এখানে স্টিল ও ঢালাই পাম্পের কেনাবেচা হয়।
সূত্রাপুর এলাকার হক মেটাল ওয়ার্কশসে এই কারখানায় রিপিয়ারিং ও ফেনিশিংয়ের কাজ করছেন অন্তত ২৫ জন শ্রমিক।
কারখানার সত্ত্বাধিকারী হুমায়ুন হক বলেন, বর্তমানে বৈদ্যুতিক মটরের কারণে পাম্প বেচাকেনা কমে গেলেও নলকূপের কদর আছে।
** মূল দলের সহযোগিতা নেই, হতাশায় বগুড়া ছাত্রদল
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৫
এমআইএইচ/এমবিএইচ