ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সিরাজ মাস্টারসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৫
সিরাজ মাস্টারসহ তিন রাজাকারের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন শুরু

ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে বাগেরহাটের রাজাকার কমান্ডার শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে।
 
সোমবার (১৫ জুন) চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়।

প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক সুমন রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগগুলোর ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারওয়ার হোসেন এবং সিরাজ মাস্টারের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী আবুল হাসান ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত রয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীদের করা সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৭ জুন) যুক্তিতর্কের দিন পিছিয়ে সোমবার (১৫ জুন) পুনর্নির্ধারণ করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করবে।

গত ৬, ৭ ও ২১ এপ্রিল আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন সাফাই সাক্ষী। তারা হচ্ছেন মো. আমজাদ শেখ, সরদার আব্দুল মান্নান, আব্দুর রশিদ মল্লিক, ইউসুফ আলী ডিহিদার এবং মো. ফেরদৌস খান।

অন্যদিকে গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে গত ২৪ মার্চ পর্যন্ত সিরাজ-লতিফ-আকরামের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হেলাল উদ্দিনসহ ৩২ জন সাক্ষী। তাদের মধ্যে ঘটনার ৩০ জন সাক্ষী হচ্ছেন দিলীপ দাস, শৈলেন্দ্র নাথ দাস, কমলা রানী চক্রবর্তী, তপন কুমার দাস, অরুণ দাস, নন্দলাল দাস, নিমাই চন্দ্র দাস, আনন্দ লাল দাস, আব্দুল আজিজ, মো. আলতাফ হোসেন কোটাল, জাহিদুল ইসলাম মন্নু, শেখ ফজর আহমেদ, সোবহান শেখ, সোহরাব নকিব, সোলায়মান সরদার, প্রেমানন্দ মজুমদার, প্রাণকৃষ্ণ হালদার, শিশির বিশ্বাস, শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বাদশা, আহমেদ আলী শেখ, সোলেমান হালদার, মীর আব্দুর রাজ্জাক, মল্লিক খলিলুর রহমান, সুকুমার দাস এবং মো. মনিরুল ইসলাম। আর জব্দ তালিকার সাক্ষী হচ্ছেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) ক্যাটালগার রবিউল আনাম খান।

গত বছরের ২ ডিসেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক সুমন।

গত বছরের ৫ নভেম্বর রাজাকার কমান্ডার ‘বাগেরহাটের কসাই’ বলে কুখ্যাত সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার এবং তার দুই সহযোগী আব্দুল লতিফ তালুকদার ও আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মোট সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং আব্দুল লতিফ ও খান আকরামের বিরুদ্ধে ৩টি করে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাগেরহাটের শাঁখারিকাঠি বাজার, রণজিতপুর, ডাকরা ও কান্দাপাড়া গণহত্যাসহ ৮ শতাধিক মানুষকে হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন এবং শতাধিক বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক সুমন। অন্যদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর ও ২০ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন আব্দুল লতিফ তালুকদার ও খান আকরাম হোসেনের পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর সরোয়ার হোসেন এবং শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টারের পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হাসান।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিসে প্রসিকিউটর সাইয়্যেদুল হক সুমন ও শেখ মুশফিক কবির তাদের বিরুদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।

তদন্ত চূড়ান্ত করে গত বছরের ২৫ আগস্ট এই তিন র‍াজাকারের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা। তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার তদন্ত দল দীর্ঘ তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রসিকিউশন এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।
 
বাগেরহাটের এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ ৯টি ভলিউমে ৫ খণ্ডে কেস ডায়েরি করে অভিযোগ দাখিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৯টি খণ্ডে মোট ৮শ’ ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্তের ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে ৬৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন তদন্ত সংস্থা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত বছরের ১০ জুন এ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২১০৫
এজেডকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।