ঢাকা: ইশতেহারের ৫ অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। নগরের যানজট, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রোববার (১৪ জুন) বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান। সাক্ষাতকারে তিনি নগরবাসীকে নতুন কিছু দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নগর সরকার প্রতিষ্ঠা, নাগরিক সমস্যা ও ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ; জলাবদ্ধতা, যানজট, পার্ক-মাঠ বেদখল ও নগর ভবনের দুর্নীতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। জানিয়েছেন বাবার চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি, কাজের অগ্রগতি এবং নগরবাসীকে নতুন কিছু দেওয়ার স্বপ্নের কথা। সাঈদ খোকন বলেন, মাত্র এক মাস হলো তো, সব কিছু দেখছি। বুঝার চেষ্টা করছি। আমার নির্বাচনি ইশতহারের অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছি।
সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে যাচ্ছি। বাবা যে চেয়ারে বসে নগরবাসীর কাজ করেছেন, মানুষের সেবক হয়েছেন। একই চেয়ারে আমি দায়িত্ব পালন করছি, অপেক্ষা করুন, আশা করছি নগরবাসীকে নতুন কিছু দিতে পারবো।
বাবার চেয়ারে সন্তানের দায়িত্ব পালনের অনুভূতি জানতে চাইলে আবেগাপ্লুত খোকন বলেন, এইখানে বাবা বসতেন। এই রুমে তার অনেক স্মৃতি। তার সঙ্গে আমি মাঝে মধ্যে আসতাম। আজ ওই চেয়ারেই আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। এটা একদিকে আনন্দের, আরেক দিকে আবেগও রয়েছে। সন্তান হিসেবে বাবার অসমাপ্ত কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
বাবার সঙ্গে দেখা সিটি করপোরেশন আর এখনকার সিটি করপোরেশনে কোনো তফাৎ দেখেন কিনা জানতে চাওয়া হলে সাঈদ খোকন বলেন, পার্থক্য অনেক। জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাও বেড়েছে। সম্ভাবনাও আছে। এই সম্ভাবনাকেই পুঁজি করে এগিয়ে যেতে চাই।
নির্বাচনের আগে নগর সমস্যা সমাধানে ইশতেহারে ৫ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন সাঈদ খোকন। এরমধ্যে ১, যানজট নিরসন, ২, দূষণমুক্ত, নাব্য ও নিরাপদ বুড়িগঙ্গা, ৩, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করা, ৪, পরিচ্ছন্ন, দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর মহানগরী এবং ৫, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবজির বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং নাগরিকজনের নিরাপদ জীবন।
প্রথম অগ্রাধিকার যানজট নিরসনের বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কেইস প্রজেক্ট নিয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে বলে মেয়র জানান। তিনি বলেন, রমজানে একটু কষ্ট হবে। তবে, উড়ালসেতুগুলোর (ফ্লাইওভার) কাজ শেষ হলে এটা অনেকটা লাঘব হবে।
সাঈদ খোকন বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ইতোমধ্যেই আমরা দুটো কমিটি করে দিয়েছি। একটি ওয়ার্ড কমিশনারদের নিয়ে, আরেকটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কমিশনারদের নিয়ে। তারা আগামী সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু করবে। ১৬ জুন থেকে সব বাড়িতে ময়লা রাখার ব্যাগ (গার্বেজ ডিসপোজাল ব্যাগ) পৌঁছে দেয়া হবে। এতে যত্রতত্র ময়লা ফেলার প্রবণতা কমে যাবে, একই সঙ্গে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ সহজ হবে।
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা বা কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে মেয়র খোকন বলেন, এটা এই সময়ের বড় সমস্যা। যদিও এটা ওয়াসার কাজ, কিন্তু মানুষ আশা করে যেকোনো সমস্যায় মেয়র তাদের পাশে দাঁড়াক। সেজন্য আপনারা দেখেছেন, আমি বৃষ্টির দিন পুরো ঢাকা ঘুরেছি। কেন জলাবদ্ধতা হয়? সমাধানে কী কী করতে হবে? মানুষের মুখে শুনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। জলাবদ্ধতা থেকে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছি। আশাকরি, ভালো ফলাফল আসবে।
বেদখল হয়ে যাওয়া পার্ক-মাঠ উদ্ধারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, আমার জানা মতে প্রায় ৬-৭টি পার্ক-মাঠ বেদখল আছে। আমরা সেগুলো উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দিয়েছি। শিগগিরই উদ্ধার হয়ে যাবে।
পার্কগুলোকে মানুষের সহজ বিচরণের জন্য চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারি ও মাদকসেবীমুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা যদিও সময়সাপেক্ষ, তবে কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে।
সিটি করপোরেশন ‘দুর্নীতির আখড়া’ এমন অভিযোগ আছে, সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ আছে জানি। হেন কোনো কাজ নেই, যা এখানে হয় নাই। এগুলোর সমাধান খুব জটিল। আসলে এটা তো দুই এক দিনে সমাধান করা সম্ভব না। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছি।
সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অব্যবস্থাপনা বিষয়ে নবনির্বাচিত মেয়র বলেন, অনেক সমস্যা আছে। কিছু সচল। কিছু অচল। সঠিক পরিযর্চার অভাবে নষ্ট হতে চলেছে অনেকগুলো। এগুলোর জন্য কাউন্সিলরদের নিয়ে একটা কমিটি করে দেব। কমিউনিটি সেন্টারগুলো উন্নত ও আধুনিকায়নের জন্য আউটসোর্সিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আসলে করার তো ইচ্ছা অনেক কিছুই থাকে। কিন্তু শুন্য হাত। টানাটানির সংসার। এখানে যাই ওখানে যাই বরাদ্দের জন্য।
সাঈদ খোকনের পিতা মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা প্রথম নির্বাচিত মেয়র। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে মোহাম্মদ হানিফ নগর সরকারের কথা বলেছিলেন। নির্বাচনে সময় সাঈদ খোকনও সময়োপযোগী বলে মন্তব্য করেছিলেন। পিতার অসমাপ্ত কাজ মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট বা নগর সরকার নিয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে। এটা আমার মাথায় আছে। উপরে আলোচনা করছি। সবার সঙ্গে কথা বলে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসবো। তবে, এটা করতে গেলে বেশ সময় লাগবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
এসকে/এসইউজে