ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে, খালেদাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে, খালেদাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম চলবে বিচারিক আদালতে। মামলাটি বাতিলে খালেদার রিট আবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন হাইকোর্ট।



আগামী দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খালেদাকে। তবে তার জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নিম্ন আদালতকে বলেছেন উচ্চ আদালত।

নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এ রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরে রুলের চূড়ান্ত রায়ে মামলাটি চলবে বলে আদেশ দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান জানান, এর ফলে এ মামলাটির কার্যক্রম চলতে আর কোনো বাধা রইলো না।

তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলায় রিট আবেদন চলে না। এক্ষেত্রে ফৌজদারি আবেদন করতে হয়। অথচ তারা রিট আবেদন করেছিলেন। এসব বিবেচনায় আদালত রিট-রুল খারিজ এবং মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন।

তিনি জানান, সেলিম ভূঁইয়া নামক এ মামলার একজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করেছেন যে, নাইকোর বিষয়ে তিন কোটি টাকার ঘুষ আদান-প্রদান হয়েছিল।

এ রায়ের ফলে নাইকো দুর্নীতি মামলা করতে দুদকের অনুমোদন সঠিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন খুরশিদ আলম খান।

খালেদার সঙ্গে আলাপ করে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করা হবে বলে জানান তার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন।

তিনি বলেন, একই বিষয়ে একই ধরনের দু’টি মামলা করা হয়েছিল। একটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে আর অন্যটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (খালেদা জিয়া)। শেখ হাসিনার মামলাটি খারিজ করে দিয়ে খালেদা জিয়ার মামলা চলবে বলে হাইকোর্ট রায় দেওয়ায় আমরা সংক্ষুব্ধ।

এর আগে গত ২৮ মে রুলের শুনানি শেষ হলে যেকোনো দিন রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়ে অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট।

খালেদা জিয়ার পক্ষে রুলের শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, রাগীব রউফ চৌধুরী ও এ কে এম এহসানুর রহমান। । দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন মো. খুরশিদ আলম খান।

নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা বাতিলেও খালেদার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে রুল জারি ও মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। গত ১৯ এপ্রিল মামলাগুলোর রুল শুনানি পেছাতে খালেদার আইনজীবীদের চারটি সময়ের আবেদন খারিজ করে দিলে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দিয়ে রুল শুনানি শুরু হয়।
 
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুল শুনানি বুধবার (১৬ জুন) শেষ হওয়ায় রায় যেকোনো দিন দেওয়া হবে বলে জানিয়ে অপেক্ষমান (সিএভি) রেখেছেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা রুল শুনানি চলছে বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চে। গত ৯ এপ্রিল এ মামলার কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেন একই আদালত।

মামলাগুলোর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি আগেও একবার শেষ হয়েছিল। এর রায়ের দিন গত ৫ এপ্রিল ধার্য ছিল বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছিল। অন্যদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি প্রথম দফায় শুরুর অপেক্ষায় ছিল।

এর আগেই এসব মামলার বেঞ্চ পরিবর্তনে গত ২ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার আইনজীবীদের এ সংক্রান্ত চারটি আবেদন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

গত ৫ এপ্রিল পূর্ববর্তী স্ব স্ব হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাগুলোর বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে গত ৭ এপ্রিল মামলা তিনটির রুল নিষ্পত্তির জন্য নতুন বেঞ্চের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)।


খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এসব মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল। সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক।
 
এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।

কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।

২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।

অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্স্’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।