ঢাকা: আদালত অবমাননার দায়ে করা জরিমানার পাঁচ হাজার টাকা না দেওয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন চেয়ারম্যান ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১০ জুন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালত অবমাননার দায়ে এক ঘণ্টার কারাদণ্ড (এজলাসকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা) এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড সাজা দেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে। ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় তার এ সাজা হয়।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধের শেষ দিন ছিল বুধবার (১৭ জুন)। কিন্তু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তা পরিশোধ না করায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলো। জরিমানা অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
গত ১০ জুনের রায় অনুসারে এজলাসকক্ষে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকার দণ্ড কার্যকরে ডা. জাফরুল্লাহকে রাজি করাতেও বেগ পেতে হয়েছিল সংশ্লিষ্টদের।
সেদিন বেলা এগারটা ২৪ মিনিটে এ রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। সে হিসেবে দুপুর বারটা ২৪ মিনিট পর্যন্ত আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থেকে দণ্ড ভোগ করার কথা ছিল ডা. জাফরউল্লাহর। কিন্তু তিনি কাঠগড়ায় উঠতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দীর্ঘ এক ঘণ্টা ২৫ মিনিট ধরে এজলাসে বাকবিতণ্ডা, ট্রাইব্যুনাল ও বিচারপতিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
দণ্ড ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল এজলাস ছেড়ে উঠে যাওয়ার সময় জাফরুল্লাহ চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে আদেশের স্থগিতাদেশও দাবি করেন। স্থগিতাদেশের সুযোগ নেই বলে ট্রাইব্যুনাল জানালে বিচারপতিদের জাফরউল্লাহ বলেন, আপনারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ আদেশ দিয়েছেন। বিচারকরা এজলাস ত্যাগ করার পরও উচ্চকণ্ঠে তিনি বলতে থাকেন, এটা বিচারকদের অসহিষ্ণুতার লক্ষণ।
অবশেষে অনেকের অনুরোধ ও জোরাজুরিতে দুপুর বারটা ৪৯ মিনিট থেকে একটা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দণ্ড ভোগ করলেও ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হয়েই ডা. জাফরুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি জরিমানার টাকা পরিশোধ করবেন না। তাতে যা হবার হবে। ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও সে সময় জানিয়েছিলেন তিনি।
প্রথমবার হওয়ায় সতর্ক করে দিয়ে একই ঘটনায় আরও ২২ বিবৃতিদাতাকে ক্ষমা করে অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে মোট ৫০ বিবৃতিদাতার মধ্যে ক্ষমা চাওয়ায় আরও ২৬ জনকে সতর্ক করে ক্ষমা করেন আর একজন বিবৃতির সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই জানালে তাকে অভিযোগের আওতা থেকে বাদ দেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) ওই দণ্ডাদেশ ও জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দাখিল করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৫
এমএইচপি/এএসআর