ঢাকা: সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাহায্যে নিজের একটি গলফ সেট বিক্রি করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার এই গলফ সেটটি যেনতেন সেট নয়।
শনিবার (২০ জুন) এ ঘোষণা দিয়ে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গলফ সেটটিসহ নিজের একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন, গলফ সেটটি আমি মরক্কোর প্রেসিডেন্টের কাছে থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছি। আমার কাছে আরও অনেক গলফ সেট আছে। তাই এই ঈদে আমি এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যার বিক্রিত অর্থ JAAGO ফাউন্ডেশনে চলে যাবে সুবিধা বঞ্ছিত শিশুদের জন্য।
শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি অন্যান্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিক্রয়ডটকমে পোস্ট করা বিজ্ঞাপণটিতেও এরশাদের এ ঘোষণাটি লেখা রয়েছে। এই পণ্যটি কিনতে চাইলে আগ্রহীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে নির্দিষ্ট ইমেইল ঠিকানায়। আগ্রহীদের ইমেইল থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপনটিতে আরও জানানো হয়েছে, পণ্যটির পূর্ণ মূল্য পরিশোধ হবার পরে তা ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করা হবে। টাকা পাঠানোর ঠিকানা ও পণ্য গ্রহণের ঠিকানা ফোনে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য এরশাদ ‘পথকলি’ নামে একটি ট্রাস্টও গঠন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে তাকে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এরশাদের এক ব্যক্তিগত সহকারী সূত্রে জানা যায়, তাজরীন ফ্যাশন ট্রাজেডির পরও দু’টি শিশুর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। তাদের মিঠাপুকুরে (গ্রামে) বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। শিশু দুটির নানা শাজাহান মণ্ডলের মাধ্যমে নিয়মিত টাকা দিয়ে যাচ্ছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এরশাদের ব্যক্তিগত এ সহকারী বাংলানিউজকে জানান, এরশাদ রানা প্লাজা ট্রাজেডির সময় গিয়েছিলেন হতাহতদের দেখতে। এনাম মেডিকেলে আহতদের বিছানার পাশে চোখের জল ফেলেছিলেন নিঃশব্দে। শাহীনুর বেগম, আরতী রানী দাস, রিক্তা বেগম, সোনিয়া খাতুন, পাখি বেগম, আন্না খাতুন ও লাবনী বেগমের বিছানার পাশে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
এই হতভাগা নারীদের কারো এক পা আবার কারো দু’পা-ই কেটে উদ্ধার করা হয়েছিলো। এই ভাগ্যবঞ্চিতদের স্বজনদের হাতে গুঁজে দিয়েছিলেন নগদ টাকা। আর ঘোষণা দিয়ে এসেছিলেন তাদের দায়িত্ব নেবেন।
অনেকে মনে করেছিলেন রাজনীতিকরা তো কত প্রতিশ্রুতিই দেন! কিন্তু বাস্তবে তা রাখেন না। কিন্তু এরশাদ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি তার কথা রেখেছেন। এনাম মেডিকেলের কর্ণধারকে বলেছিলেন এই ৮ জনের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে, যাতে তাদের সহায়তা করতে পারেন। এনামুর রহমান ইউসিবিএল ব্যাংকের সাভার শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলে দেন।
আর সেসব অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে যাচ্ছেন এরশাদ। এখানেই শেষ নয়। যাদের জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে তারা ঠিকমতো তা তুলে নিতে পারছেন কিনা সে খোঁজও নিচ্ছেন ব্যাংকে ফোন দিয়ে।
শুধু শাহীনুর বেগমের হিসেবে ৮ মাসের টাকা জমা রয়েছে। অন্যরা টাকা তুলে নিয়েছেন। পরে ব্যক্তিগত সহকারি জাহাঙ্গীর আলমকে বলেছিলেন, শাহীনুর বেগমের খোঁজ নিতে। শাহীনুর বেগম ভালো আছেন জেনে আনন্দিত হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১১১
এসএ/এমজেএপ