ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন আ’লীগের নীতিনির্ধারকরা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ডে উদ্বিগ্ন আ’লীগের নীতিনির্ধারকরা

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে বার বার সমালোচনার মধ্যে পড়ছে সরকার। এসব ঘটনায় সরকারকে পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

সম্প্রতি সংরক্ষিত নারী আসনের এক এমপি পুত্রের ঘটানো জোড়া খুনের ঘটনা এর সর্বশেষ সংযোজন।

নেতাকর্মীদের অপকর্মের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলকেও। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানান, এ সব ঘটনায় একদিকে যেমন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে পাশাপাশি সরকারের উপর মানুষের ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে। কিছু নেতাকর্মীর অপকর্মের দায়ভার এসে পড়ছে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে।  

আওয়ামী লীগের ওই নেতাদের মতে, সরকার অনেক উন্নয়ন কাজ করেছে। গত ৬ বছরে দেশে অনেক কাজ হয়েছে। এছাড়া অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে যেগুলো বাস্তবায়নাধীন। সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সুফল মানুষ পাচ্ছে। কিন্তু দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে সরকারের এ সফলতা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। সরকারের জনপ্রিয়তা নষ্ট হচ্ছে।

এলাকায় প্রভাব বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, হত্যাকাণ্ড, মাদক ব্যবসা, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সন্ত্রাসী তৎপরতা ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে নেতাকর্মীরা। একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জন্ম নিচ্ছে আরেকটি। দলের নেতাকর্মীদের এসব অপকর্ম সরকারের জন্য নেতিবাচক হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে দুই শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার রনি। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জন্ম দেয় ব্যাপক সমালোচনা। সরকার দলীয় এমপির ছেলের এই অপকর্মে স্বাভাবিকভাবেই বিব্রত সরকার ও দল। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরাও ওই এমপির উপর ক্ষুব্ধ।

সূত্র জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এমপি পিনু খানের ছেলে যেন কোনোভাবে ছাড় না পায় সে ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার পর পিনু খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য বহু চেষ্টা করলেও সাড়া দেননি প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া গত বছর নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় জড়িত তিন র‌্যাব কর্মকর্তার একজন সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর জামাতা। পাশাপাশি এ ঘটনার মূল হোতা আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা। এই ঘটনাও সরকার ও আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়।  

গত ১০ জুন রাজধানীর শ্যামপুরে জোট শরিক জাতীয় পার্টির এমপি (ঢাকা-৪) আবু হোসেন বাবলার কার্যালয়ে হামলা, গুলি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আবু হোসেন বাবলা ও সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের এমপি সানজিদা খানমের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকে এ ঘটনা ঘটে। সানজিদা খানমের নির্দেশে তার লোকজন হামলা করে বলে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ করেন বাবলা।

গত ১৪ মে টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এ ছাত্র নিহত ও দুইজন আহত হয়।

গত ১২ এপ্রিল কুমিল্লায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নিহত হয়।

এছাড়া হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত হয় আরও দুইজন।

কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির বিরুদ্ধে আগে থেকেই রয়েছে সন্ত্রাসী তৎপরতা, মাদক ব্যবসা, মানব পাচারসহ নানা অভিযোগ।

কিছু দিন আগে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তাকে লাঞ্ছিত করেন।

এ ঘটনাগুলো যেমন দল ও সরকারের জন্য বিব্রতকর তেমনি হতাশা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা।

তাদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য,শিক্ষা, কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, রফতানি, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের অনেক সফলতা রয়েছে। ভারত, মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়, দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে ঝুলে থাকা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

কিন্তু দলের কিছু নেতাকর্মীর কারণে সরকারের এই সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অথচ এর স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। একটা ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই আরেকটি ঘটনার জন্ম হচ্ছে। এ সব ঘটনায় সরকারের উপর মানুষ ক্ষুব্ধ হচ্ছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।   

এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এই ঘটনাগুলো সরকারকে বিব্রত করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দিন রাত পরিশ্রম করে আমাদের নিয়ে কাজ করছেন। শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন করছেন, সফলতা বয়ে আনছেন, অথচ কিছু লোকের কারণে কখনও কখনও সরকারকে বিব্রত হতে হয়। তবে যারা এই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে তাদের সরকার ছাড় দেয়নি, কখনও দেবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলনিউজকে বলেন, রাজনৈতিক দলের কাছে জনগণের অনেক প্রত্যাশা থাকে। আর যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের কাছে তো বটেই। দলের কেউ অন্যায় করলে তার নেতিবাচক প্রভাব সরকারের উপর পড়ে। সরকার সমালোচিত হয়। এগুলো আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। তবে অপরাধীকে সরকার ছাড় দিচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ২২২৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
এসকে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।