ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

৬৬ বছরে আওয়ামী লীগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
৬৬ বছরে আওয়ামী লীগ

ঢাকা: ২৩ জুন, মঙ্গলবার। গৌরব উজ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী।

সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দলটি ৬৭ বছরে পা রাখছে।
 
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুর‍ানো ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। যার লক্ষ্য ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায় করা।

মুসলিম লীগের প্রগতিবাদী নেতাদের উদ্যোগে এক কর্মী সম্মেলনে প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে আত্মপ্রকাশ করে দলটি।

এর প্রায় চার বছর পর ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামে বাঙালির লড়াই সংগ্রমের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ এ রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা হয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের ‘প্রতিষ্ঠান’ হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ।
 
ভাষা আন্দোলন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মতো দিকপাল নেতাদের সঙ্গে মুসলিম লীগের দূরত্ব, উদীয়মান তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহকর্মীদের দ্রোহ ও সাহসী পদক্ষেপ ঐতিহাসিক পরিণতি নির্ধারণ করে দেয়।

এ সময় দিক-নির্দেশনা এবং নেতৃত্বহীন অসংগঠিত জনতাকে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক কর্মসূচির ভিত্তিতে সংগঠিত করা এবং মুসলিম লীগের বিকল্প গড়ে তোলার তাগিদ সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ে এগিয়ে চলে। দলটির সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে অধিকার আদায়ের আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটি।
 
ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি উপনিবেশিক শাসক-শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির যে জাগরণ ও বিজয় সুচিত হয় সেই আন্দোলনেরও নেতৃত্বে দেয় আওয়ামী লীগ। যার অগ্রভাগে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

এর পথ ধরেই ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। গণঅভ্যূত্থান এবং নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।

দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিয়ে নানা ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে দলটি। এরমধ্যে কখনও নেতৃত্ব শূন্যতা, কখনও বা ‘দ্বন্দ্বে’  ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা হত্যার পর নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলে সৃষ্টি হয় দ্বন্দ ও ভাঙন।

এছাড়া দেশ স্বাধীনের দীর্ঘ সময় থাকতে হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে। এরইমধ্যে চরম ক্রান্তি লগ্নে ১৯৮১ সালে দলের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

তার নেতৃত্বে ঐক্যবব্ধ হয়ে এগিয়ে চলে দ্বিধা-বিভক্ত আওয়ামী লীগ। ফলে প্রায় দুই দশক পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে দলটি।

এরপর ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ও সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

এছাড়া সকাল ৭টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলের শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৫
এসকে/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।