ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সরকারই আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে: খালেদা জিয়া

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১০
সরকারই আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে: খালেদা জিয়া

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন চালিয়ে সরকার নিজেই বিরোধী দলের জন্য আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে। ’

শনিবার সকালে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।



বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়ে উঠেছে যে কঠোর আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এ আন্দোলনের নেতৃত্ব বিএনপিকেই দিতে হবে। ’

রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সকাল পৌনে ১১টায় খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়।

স্বাগত বক্তব্যে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানান দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটি সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে গণভবনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ সভা হয়। আর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে গঠিত নির্বাহী কমিটির এটাই প্রথম সভা। রাত ৯টা পর্যন্ত বৈঠক চলবে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

উদ্বোধনী বক্তৃতায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্লোগান ছিল- দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও। কিন্তু তখন মানুষ এই স্লোগান কেন দেওয়া হয়েছিল তা ভালো করে বুঝতে পারেননি। এখন সাধারণ মানুষের উপর নির্মম নির্যাতন, হত্যা, গুম, দেশবিরোধী চুক্তি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, গ্যাস-বিদুৎ-পানির সঙ্কট, সরকার দলীয় ক্যাডারদের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিশৃঙ্খলা, ধর্ষণ, সর্বপরি দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতায় জনগণ উপলব্দি করতে পেরেছে কেন আমরা ওই স্লোগান দিয়েছিলাম। ’

সরকারের অন্যায় অত্যাচার ও ব্যর্থতার কারণেই দেশে গণআন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী।

দেশে এখন দুঃসময় চলছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এখন হুমকির মুখে। সরকার ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে ও আরও যেসব চুক্তি করতে যাচ্ছে তাতে দেশের অবস্থা হবে ভয়াবহ। ’

তিনি  বলেন, ‘ভ্রান্ত নীতি ও বিদেশ তোষণের কারণে দেশ আজ অনিশ্চয়তার দিকে  যাচ্ছে। এসবের সঙ্গে দলীয় চাঁদাবাজি যোগ হওয়ায় একের পর এক শিল্প কারাখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ’

নিখোঁজ বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের সন্ধান ও মির্জা আব্বাসসহ দলের সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকারের মিথ্যা মামলার কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে সংসদে কথা পর্যন্ত বলতে দেওয়া হয় না। এসব নিয়ে সাংবাদিকরা যাতে লিখতে না পারেন সেজন্য সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক গণতন্ত্র বলে না। সরকার গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় বাকশালি শাসন চালাচ্ছে। ’

খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। পরবর্তীতে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিল। এবারও বিএনপিকেই গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিতে হবে। ’

মতবিরোধ ভুলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দলকে আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

দেলোয়ার তার স্বাগত বক্তব্যে সদ্য পরলোকগত মান্নান ভুঁইয়াসহ শ্রমিক দল নেতা বাকের হোসেইন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আহম্মদ প্রমুখের জন্য শোক প্রকাশ করলেও সাইফুর রহমানের নাম মুখে নেননি।

তিনি বলেন, ‘গত ১৮ মাসে ৩৬৪টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, ২১৫টি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বিএসএফের হাতে খুন হয়েছেন ১৩১ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৪৫ জন। নির্যাতিত হয়েছেন ৩১৮ সাংবাদিক। ৪ সাংবাদিক খুন হয়েছেন। ’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত দেড় বছরে ৪১৭টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে অভিযোগ করে দেলোয়ার বলেন, ‘অর্ধশতাধিক কারখানা ভারতীয় মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও শতাধিক কারখানা ভারতীয় মালিকদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। দেশের জন্য এটা শুভ নয়। ’

দেলোয়ার আরও বলেন, ‘জনগণ সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের অংশীদার বিএনপি হতে চায় না। তাদের দু:শাসনের প্রতিবাদ ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ’  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad