ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

হায় হায় এরশাদে কি কয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
হায় হায় এরশাদে কি কয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ/ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে জোয়ার এসেছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় জাতীয় পার্টি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী’।



এমন কথা সম্প্রতি বিভিন্ন সমাবেশে বলেছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সেই এরশাদই এবার বাবলুকে পার্টির মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে যা বললেন ‍তা মনে হয় অনেকে স্বপ্নেও ভাবতে পারবেন না। যে এরশাদ বাবলুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন সেই তিনিই এবার বললেন, বাবলু দলকে শেষ করে দিয়ে গেছে। কয়েকটি জেলার সম্মেলন করেছে তাও আমার সহযোগিতা ছাড়া করতে পারেনি।

এরশাদ এর আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে যখন পার্টির মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেন তখন বলেছিলেন, হাওলাদার চৌদ্দ বছর মহাসচিব থেকে দলকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সে কিছুই করতে পারেনি। সেই হাওলাদারকেই আবার মহাসচিব করেছেন এরশাদ। এবারও বিদায়ী মহাসচিবের উদ্দেশ্যে একই বাণী দিয়েছেন তিনি।

এখানেই শেষ নয়, ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছিলেন, বিএনপি আমাদের সমাবেশ বানচাল করার জন্য হরতাল দিয়েছে। কিন্তু হরতাল উপেক্ষা করে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হয়েছে।

এ জন্য সেদিন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন এরশাদ।

আর সেই এরশাদ ২১ জানুয়ারি বাবলুকে সরিয়ে দেওয়ার পর বললেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশের জন্য এক কোটি টাকা বাজেট ছিল। বাবলু সমাবেশ সফল করতে পারেনি। দশ হাজার লোকও আনতে পারেনি।

এরশাদের এমন লাগামহীন বক্তব্য দলের মধ্যেই মুখরোচক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একজন তো বলেই বসলেন, হায় হায়, স্যার(এরশাদ) কয় কি। সেদিন কি বলেছিলেন, আর এখন এসব কি বলছেন। আর কেনইবা এসব কথা বলতে হবে? কি লাভ হচ্ছে এসব বলে। বরং নিজেই মানুষের হাসির খোরাক হচ্ছেন।   স্যারের কাছাকাছি যারা থাকেন তারা কি কিছুই বুঝান না। অন্যজন বলে উঠলেন, তোমার স্যার কি কারো কথা ধরেন যে বলে কোন লাভ হবে।

একটি ক্ষেত্রে যদি এমন হতো তাহলে হয়তো এতো কথা উঠত না। যে বাবলু সম্পর্কে এখন সমালোচনা করছেন তার সম্পর্কে চট্টগ্রাম লালদিঘী ময়দানে এরশাদ বলেছিলেন, ১৫ বছর পর লালদিঘী মাঠে এলাম। কেউ এখানে আনতে পারেনি। বাবলু আমাকে এনেছে। আজ সমাবেশে লোকসমাগম প্রমাণ করে সমাবেশ সফল হয়েছে। জাতীয় পার্টি আজ চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে বলেছিলেন, অনেকে বলেছিলেন জাপা মরে গেছে। আমার সঙ্গে কেউ নেই। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- দেখুন জাপা কতো শক্তিশালী হয়েছে। এই সমাবেশে জনতার স্রোত প্রমাণ করে জাতীয় পার্টি এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

বিভিন্ন কর্মী সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, আমাকে কেউ জেলায় নিয়ে যায়নি। নিয়ে যাওয়ার লোক ছিল না। বাবলু এসে (মহাসচিব হয়ে) জেলায় জেলায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

শুধু কি মহাসচিব পদ নিয়ে ডাবল স্ট্যান্ড, তা কিন্তু নয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির কমিটি নিয়ে এরশাদের এমন অবস্থান দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। হঠাৎ একদিন বাবলাকে সরিয়ে দিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদকে মহানগরের আহ্বায়ক করা হয়।

কমিটি দেওয়ার পর এক ইফতার পার্টিতে এরশাদ বলেছিলেন, বাবলা দলের জন্য কিছুই করেনি, দলকে শেষ করে দিয়েছে। ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঢাকায় সবচেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।

বাবলাকে যেভাবে সরিয়ে দিয়ে ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক করেছিলেন- একই কায়দায় (৩৯ ধারায়) ২০১৪ সালের এপ্রিলে ফিরোজকে সরিয়ে ফের বাবলাকে আহ্বায়ক ঘোষণা করেন এরশাদ। নতুন কমিটি দেওয়ার পর পার্টি অফিসের সামনে বাবলাকে সংবর্ধনা দেয় মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এরশাদ সেই পুরনো সুরে গান ধরেন। এবারও একই কথা বলেন, জাতীয় পার্টি আজ ঢাকায় নতুন করে জেগে উঠেছে। ফিরোজ রশীদকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, দলকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।

কমিটি কমিটি খেলার বাইরেও এরশাদের এই দ্বি-মুখিতা রয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেছিলেন, তিনি শিগগিরই বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। যদিও এই কথা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২৩ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূতের পদ দিয়ে সম্মানিত করেছেন। আমি পদত্যাগ করলে তিনি অসম্মানিত হবেন। তাই আমি পদত্যাগ করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অব্যাহতি চাইব।

দলের মধ্যেই চাউর ‍আছে, সকালে এক কথা আর বিকেলে অন্যকথা বলেন এরশাদ। জাতীয় ইস্যুতে তার এই দ্বিমুখি কথাবার্তার কারণে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে খোদ দলের নেতারাই স্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, এতে তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে।

এরশাদের এই দ্বিচারিতার বিষয়ে কেউই সরাসরি মুখ মুখলতে রাজি হননি। প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান বলেছেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রসঙ্গে কোন মন্তব্য করতে চাই না। কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৬
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।