ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

রাজশাহী থেকে মান্নান মারুফ

দ্বন্দ্ব-ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে রাজশাহী বিএনপি

মান্নান মারুফ ও শরীফ সুমন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
দ্বন্দ্ব-ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে রাজশাহী বিএনপি রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাদের সংবাদ সম্মেলন/ফাইল ফটো

রাজশাহী থেকে: স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে রাজশাহী বিএনপি। এই দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে।

এরইমধ্যে কাউন্সিল ঘিরে অসন্তোষের কারণে নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগও শুরু করেছেন। এমন দ্বন্দ্ব-ক্ষোভের কারণে গতবছর সারাদেশের মতো রাজশাহীতে কাউন্সিল শুরু হলেও তা এখনও শেষ করতে পারেননি নেতারা
 
অভিযোগ উঠেছে, আত্মগোপনে থাকা রাজশাহী মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলপন্থিদের বাদ দিয়ে সাবেক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু দলের নগর শাখার কয়েকটি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেছেন। এ কারণেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে মিনুর বলয়ের বাইরের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সাংঘর্ষিক অবস্থা থেকে রেহাই পেতে সেজন্য বাকি ওয়ার্ডগুলোর কমিটি ঘোষণা থেকে বিরত রয়েছেন তিনি।

জানা যায়, কমিটি গঠনে মিনুর একক সিদ্ধান্তের কারণে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ও রাজপাড়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, মহানগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ভূঁইয়াসহ সাত নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন। এ পদত্যাগের পর ছিন্ন-বিছিন্ন বিএনপি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

পদত্যাগ করা অন্য ছয় নেতা হলেন- ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব সাঈদ টুকু, রাজপাড়া থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ পারভেজ পিন্টু, রাজপাড়া থানা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাকলাইন ও ২নং ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী।

এ বিষয়ে আলাপ করলে রাজপাড়া থানা বিএনপির সদ্য পদত্যাগী সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে একটি পদের জন্য অনেক প্রতিযোগী থাকবে। অনেক সময় কারও ইচ্ছের প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে।

তিনি জানান, বর্তমান কাউন্সিল নিয়ে তার ইচ্ছের প্রতিফলন না ঘটনায় তিনি স্বেচ্ছায় সরে এসেছেন। তবে তিনি দলকে ভালোবাসেন। দলের যে কোনো প্রয়োজনে বা সঙ্কট মুহূর্তে আগের মতোই সবার পাশে থাকবেন।

বুলবুলপন্থিদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি আয়োজন করা এসব কাউন্সিলে গণতন্ত্রের ন্যূনতম নিয়ম মানা হচ্ছে না। ঘরোয়াভাবে আয়োজন করে হাতেগোনা কয়েকজনকে ডাকা হচ্ছে। সেখানে মেয়র বুলবুলপন্থি নেতাকর্মীদের ডাকা হচ্ছে না। কাউন্সিলে গোপনীয়তাও দেখা যাচ্ছে।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি, যে কমিটি বর্তমানে আছে তা কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে ভেঙে দিতে হবে। এরপর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে। ওই আহ্বায়ক কমিটিকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কাউন্সিল করে মহানগরীর ৯নং ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে বর্তমান সেক্রেটারি আক্তার সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু সভাপতি রেখে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বলয়ের আগের সভাপতি বাদশাকেই। এ কারণে তৃণমূলে ক্ষোভ দেখা যায়।

এজন্য দলের আর কোনো পদেই থাকতে চাননি আক্তার। তবে, এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

সম্প্রতি রাজশাহী নগর বিএনপির কার্যালয়ে রাজপাড়া থানার আটটি ও বোয়ালিয়া থানার একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিল হয়। এর মধ্যে ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলে ছিলেন মাত্র ৯ জন। এভাবে বাছাই করা এবং স্বল্পসংখ্যক উপস্থিতি নিয়ে গঠিত হয় ১, ৩ ও ১৩নং ওয়ার্ডের নতুন কমিটি। এর মধ্যে আবার ১নং ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক, ৩নং ওয়ার্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ১৩নং ওয়ার্ডে সভাপতিকে বাদ দিয়েই কমিটি ঘোষণা করা হয়। যাদের বাদ দেয়া হয়েছে তারা সবাই মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলপন্থি বলে পরিচিত।

একইভাবে ১০নং সাংগঠনিক ওয়ার্ডের কমিটিও গঠিত হয় সম্প্রতি। এতে মোজাম্মেল হককে সভাপতি, সেলু শেখকে সাধারণ সম্পাদক ও মোসাদ্দেকুর রহমান লিটনকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৬নং ওয়ার্ডে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় দুলাল হোসেনকে, আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় শফিকুল ইসলাম শিমুলকে।

তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, নগর বিএনপিতে মিজানুর রহমান মিনুকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক রাখতেই বুলবুলপন্থিদের বাদ দিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি করা হচ্ছে।

যদিও মহানগর বিএনপির নেতাদের দাবি, কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে এসব ওয়ার্ড কাউন্সিল চলছে।

তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর বিএনপির সাত পদত্যাগী নেতাদের মধ্যে একজন বাংলানিউজকে জানান, যে পন্থায় কাউন্সিল হচ্ছে, তাতে দলের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এতো বড় দলে এভাবে কমিটি হলে জনগণের ইচ্ছের প্রতিফলন হবে না। এই ক্ষোভ থেকেই দল থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

তৃণমূল নেতাদের অনেকেই অভিযোগ করেন, মহানগরে যে কমিটি গঠন করা হবে তাতে নিশ্চিত সভাপতি হবেন মিজানুর রহমান মিনু। সে কারণে ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও বাইরে কেউ প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

তারা বলেন, দলের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকলে বিএনপি সামনে এগিয়ে যাওয়ার বদলে পিছিয়ে যাবে।

যদিও এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও রাজপাড়া থানা সভাপতি শওকত আলী জানান, পুলিশের ধর-পাকড় ও মামলা-হামলার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ভয়ের মধ্যে ছিলেন। নতুন করে ঢেলে সাজানোর কারণে তৃণমূলের মধ্যে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের কাউন্সিলগুলোতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

কেন্দ্রের নির্দেশমতে, নগরের ৩৭টি ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিল ১৬ এপ্রিল শেষ করার কথা। এরপর চারটি থানা কাউন্সিল করে ২০ ফেব্রুয়ারি মহানগর কাউন্সিল করার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস পেরিয়ে গেলেও ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিলই শেষ করতে পারেনি বিএনপি।
 
এসব বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।