ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

তদারকি সরকার ও নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠনের দাবি বাম জোটের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৮
তদারকি সরকার ও নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠনের দাবি বাম জোটের গণভবনে সরকারি জোটের সঙ্গে আট দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সংলাপ-ছবি-পিআইডি

ঢাকা: সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুর্নগঠন, মিথ্যা-গায়েবি মামলা বন্ধ করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে আট দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোট। দাবি মেনে নির্বাচনী গণতান্ত্রিক পরিবেশ না করলে নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছে এ জোট।

মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারি জোটের সঙ্গে সংলাপে এসব দাবি জানায় বাম জোট। রাত সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে সাড়ে ১০টায় শেষ হয় সংলাপ।

**প্রয়োজনে নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের হুমকি বাম জোটের

সংলাপ শেষে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলেছি যে তফসিল ঘোষণার আগে এই সংসদকে বাতিল করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করতে হবে। ’

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই জানিয়ে তা পুর্নগঠন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনভাবেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু না করার দাবি বাম জোটের পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিরোধী জোটের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে যে দমন-নিপীড়ন চলছে, হয়রানি চলছে, মিথ্যা মামলা চলছে, গায়েবি মামলা চলছে, আমরা বলেছি এগুলো বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন কাউকে হয়রানি না করা হয়। রাজনৈতিক যে মামলা করা হয়েছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে ও রাজবন্দি হিসেবে যারা কারাগারে আছে তাদের মুক্তি দিতে হবে। ’

তিনি বলেন, ‘সরকারি দল তারা যে গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বী দল ও প্রার্থীদের জন্য একই ধরনের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। ’

বাম জোট সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলো উথাপন করেছি, লিখিতভাবে উথাপন করেছি; যুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে এই কথাগুলো আমরা উথাপন করেছি। ’

‘আমরা বলেছি, আমরা দেখতে চাই যে, সরকার এ ব্যাপারে কার্যকরী রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। জনগণের অধিকারের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ’

বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে সমস্যা সমাধান জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছি বিদ্যামান যে সমস্যাগুলো আছে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব। ’

তিনি বলেন, ‘যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, যেহেতু সংসদ এখন পর্যন্ত বহাল আছে। এই সংসদে সরকারি দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ইচ্ছা করলেই তারা প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারেন। আমরা এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলেছি। ’

সংলাপ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, ‘সংলাপের ফলাফলের দিকে আমরা তাকিয়ে থাকবো, সমগ্র জনগণ তাকিয়ে থাকবে, আমরা আশা করবো জনগণের আশা-আকাঙ্খার কথা বিবেচনা করে তারা দেশ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি আশ্বস্ত করবেন। ’ 

রাজপথে আন্দোলনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরে তিনি কিভাবে দেখছেন তার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের আন্দোলনে করণীয় ও রাজনৈতিক করণীয় নির্ধারণ করবো। এবং সংবাদ সম্মেলন করে সবার কাছে তুলে ধরবো। ’

‘আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আজ আমাদের দেশব্যাপী পদযাত্রা হয়েছে। সুতরাং রাজপথের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। ’

বাম জোট সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করতে চাই, নির্বাচন করার জন্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য সংলাপ করছি, রাজপথে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছি। ’

‘আমরা এখনও আশা করতে চাই যে, ‘শেষ মুহূর্তে হলেও সরকারের সদিচ্ছা জাগ্রত হবে। এবং তারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। ’

বল প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে, প্রয়োজনে নির্বাচন বয়কট

প্রয়োজনে নির্বাচন বয়কট করে আট দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোট আন্দোলনের জন্যও প্রস্তুত জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছি। এখন বল তার কোর্টে। তিনি এগুলো বিবেচনা করে কি সিদ্ধান্ত নেন তার ওপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি হবে না। ’ 

সেলিম বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি। পরিস্থিতি অনুকূল না হলে সেটা বয়কট করার জন্যও প্রস্তুত আছি। আমরা অপেক্ষা করে থাকবো প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা কতটুকু বিবেচনায় নিয়েছেন। ’ 

সংলাপে বাম জোটের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মানুষের ভোটাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসা আওয়ামী লীগ আজ জনগণের অবাধ ভোটাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। আমাদের বিবেচনায় দশকের পর দশক জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াই এর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরাজয়। ’

অন্যদের মধ্যে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন-সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটি সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী ও আলমগীর হোসেন দুলাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য মোমিনুর রহমান বিশাল, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রনজিৎ কুমার।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৮
এমইউএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।