পাশাপাশি নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ঠিক রাখতে কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গত ১ নভেম্বর এবং ৭ নভেম্বর দুই দফায় সংলাপে বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংলাপে দীর্ঘ আলোচনা হলেও উভয়পক্ষই আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে সেগুলো সংবিধান বহির্ভূত বলে নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী নেতারা জানান, সংবিধানের বাইরে আওয়ামী লীগ যাবে না এটা অনেক আগে থেকেই তারা স্পষ্টভাবে বলে আসছেন। বিএনপি ও পরবর্তীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেসব দাবি উপস্থাপন করেছে সেগুলো সংবিধান বিরোধী একথা বারবার বলে আসছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু তারপরও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যেহেতু সংলাপ চেয়ে চিঠি দেয়, আলোচনা করতে চায় সে কারণেই তাদের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনায় বসা হয়।
তারা যেসব দাবি দিয়েছে তার মধ্যে যেগুলো সংবিধান সম্মত সেগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংবিধানের ভেতরে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তাও তাদের দেওয়া হয়েছে। তবে সংসদ ভেঙে দেওয়া, একজন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ১০ উপদেষ্টার অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়াসহ যেসব দাবি রয়েছে সেগুলো সংবিধান সম্মত নয়।
সংলাপে তাদের এসব দাবি নাকচ করে সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের এই অবস্থান আবারও স্পষ্ট করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যেসব দাবি সংবিধান সম্মত নয় তা আওয়ামী লীগ মানবে না-এটা জেনেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপে এসেছে। এখন এই অবস্থা মেনে নিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। তবে তারা যদি নির্বাচনে না আসে তারপরও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ঠিক রাখতে সরকার যা করার তা করবে।
একাধিক সূত্র বলছে, গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির যে চেষ্টা করেছিলো এবার সেই সুযোগ তারা পাবে না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ও নির্বাচনে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ও সরকার প্রস্তুত রয়েছে।
গত বুধবার (৭ নভেম্বর) সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, রোড মার্চ, পদযাত্রা এসব শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। এ ব্যাপারে তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
‘তবে যদি তারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) এসব কর্মসূচির নামে জ্বালাও-পোড়াও, বিশৃঙ্খলা করে তবে সেটা তো মেনে নেওয়া হবে না। এসব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করা হবে। ’
যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। রাজনীতি করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে। আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না এটা তো তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন নির্বাচনে আসা না আসা তাদের ব্যাপার।
‘তবে নির্বাচনে না এলেও গতবারের মতো কোনো পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে মনে করি। কারণ গতবারের ঘটনার পর তাদের শিক্ষা হয়েছে। দলটি এখন নেতৃত্ব শূন্য। ’
তবে বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলেই বিশ্বাস করেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ও বিশ্বাস বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আলোচনায় আমার এটাই মনে হয়েছে।
‘সংলাপে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা সহযোগিতার দরকার সব-ই করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
এসকে/এমএ