রুহুল কবির রিজভী শনিবার (২৪ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কয়েকজন সচিবের সঙ্গে গত ২০ নভেম্বর অফিসার্স ক্লাবে পুলিশের ‘গোপন বৈঠকের তথ্য’ দিয়েছিলেন। তবে এ তথ্য মিথ্যা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে মামলা
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ, ইসি সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন রিজভী।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং মানহানিকর অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার।
নোটিশে বলা হয়েছে, নোটিশ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আপনার বিরুদ্ধে দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হবো।
‘ওই দিন রাত ৮টায় অফিস ত্যাগ করেন জনপ্রশাসন সচিব’
জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদকে জড়িয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচির রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর প্রকাশিত বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য দিয়েছেন। কল্পিত ঘটনায় তিনি জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদকেও জড়িয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।
‘সংবাদে যে তারিখ ও সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেই তারিখ ও সময়ে জনপ্রশাসন সচিব মন্ত্রণালয়ের দাফতরিক কাজ সম্পাদন শেষে রাত ৮টায় পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে অফিস ত্যাগ করেন। ওই দিন তিনি অফিসার্স ক্লাবেই যান নাই, অথচ তাকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছড়ানো হয়েছে, যা উক্ত কর্মকর্তার সুনাম ও সম্মান হানিকর। ’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মমিনুল হক স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে জনপ্রশাসন সচিবকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তিনি বলেন (জনপ্রশাসন সচিব), অসত্য বক্তব্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অধিকার কারও নেই। এ ধরনের অসত্য বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
সোনারগাঁও হোটেলে ছিলেন বিমান সচিব
বিমান সচিবের প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০ নভেম্বর ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চতুর্থ তলার কনফারেন্স রুমে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ‘গোপন মিটিং’ হয়েছে মর্মে প্রকাশ করা হয়েছে।
‘বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর উদ্ধৃতিতে উক্ত কল্পিত খবরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হককে জড়িয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে। ’
প্রতিবাদ লিপিতে আরো বলা হয়, ঢাকা অফিসার্স ক্লাব সরকারের বিভিন্ন পদে কর্মরত ও সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ক্লাব। অফিস সময়ের পরবর্তীতে অবসর সময়ে ক্লাবের সম্মানিত সদস্যরা এ ক্লাবে খেলাধুলা, বিনোদনসহ অন্যান্য সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। এ বিষয়টি প্রাত্যহিকভাবে ঘটে থাকে। তাই সন্ধ্যার পর ক্লাবে উপস্থিত থেকে বিনোদন ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মতো অতি স্বাভাবিক একটি কার্যক্রমকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে প্রকাশ করা চরম বিভ্রান্তিকর এবং একজন ক্লাব সদস্যের জন্য অবমাননাকর।
‘বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বর্ণিত দিন ২০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হোটেল প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ হোটেলস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (হিল) এ পূর্বনির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভা ও পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত ছিলেন।
এ ধরনের বিভ্রান্তির বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ