বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর মোহাম্মদ এ আরাফাত এসব কথা বলেন।
তার মতে, নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার হেন কোনো কাজ নেই যা বিএনপি করছে না।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে প্রফেসর আরাফাত বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচনে ১০০ টি আসনে ইভিএমে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট নেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো ইসির। কিন্তু এখন ছয়টা আসনে নেওয়া হচ্ছে, এটা তো বিএনপির দাবির মুখেই।
পড়ুন>> মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল রাজনীতি চর্চা করতে হবে
‘তারেক রহমান একজন পলাতক আসামি হয়ে জনসম্মুখে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে পারেন না। তবে সংশ্লিষ্ট অথোরিটির পরামর্শে করতে পারেন। কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে একজন পলাতক আসামি যদি কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখে সেটা পরিবারের লোকজনও যদি হয় তাহলে তা আইনত দণ্ডনীয়। অথচ তারা সেটাই করেছে। ’
মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, অনলাইনে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ ইসিতে অভিযোগ করেছে। কিন্তু ইলেকশন কমিশন বললো, তাদের কিছু করার নেই। এত কিছু তাদের পক্ষে গেলেও এবং নিরপেক্ষভাবে করার পরও বিএনপি বলছে, ইলেকশন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। দেশের নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড নেই।
‘এটা ওদের (বিএনপি) কৌশল, আসলে একটা অপকৌশল, ঢালাওভাবে অভিযোগ করে মিথ্যাচার করে, আইনের বাইরে গিয়ে অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মধ্যে একটি ভুল পারসেপশন ক্রিয়েট করে আগে থেকেই কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে,’ যোগ করেন তিনি।
নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে এই শিক্ষাবিদ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত পিসফুল (শান্তিপূর্ণ) সিচুয়েশন কোনো ইলেকশনের আগে ছিলো? কখনও ছিলো না। এরপরও তাদের অভিযোগের শেষ নেই এবং প্রত্যেকটি অভিযোগই মিথ্যা। আইনের দৃষ্টিতে যাবেন, দেখবেন এগুলো ঠিকবে না।
‘আমি মনে করি এখন তাদের (বিএনপি) কাজ হয়ে গেছে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার চাইতে কিভাবে ইলেকশন কমিশনকে বিতর্কিত করা যায় এবং নির্বাচনী পরিবেশকে বিতর্কিত করা যায়-এটাই তাদের কৌশল। ’
সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন বলেন, তবে কিছু কিছু সময় বিচ্যুতি হয়। যেমন মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময় দুয়েকটি ঘটনা। মনোনয়নপত্র নিতে গিয়ে নয়াপল্টনে গাড়িও তো পুড়িয়েছে তারা। হেলমেট বাহিনী- বলা হলো ছাত্রলীগ। পরে বেরিয়ে এসেছে এটি করেছে ছাত্রদল।
গ্রেফতার নিয়ে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের কথা- যারা মনোনয়নপত্র পেয়েছে বা জমা দিয়েছে তাদের গ্রেফতার করা যাবে না। আরে তারা যদি অপরাধ করে থাকেন বা তাদের বিরুদ্ধে কোর্টের (আদালত) পরোয়ানা জারি থাকে তাহলে কেন গ্রেফতার করা যাবে না?
‘মনোনয়নপত্রকে ঢাল হিসেবে নিয়ে যে মনোনয়নপত্র নিলে গ্রেফতার করা যাবে না- এটা তো ঠিক নয়। তাদের (বিএনপি) একজন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন যিনি লন্ডনের আদালতে কনভিক্টেড। বাংলাদেশে সে পলাতক। তাদের নেতা যেমন লন্ডনে পলাতক, তিনি বাংলাদেশে পলাতক। এই ধরনের দল বিশেষ করে যাদের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সীমা নেই- তাদের সঙ্গে সো কল্ড ঐক্যফ্রন্টের লোকজন কী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে, আল্লাহ জানে। ’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের কথা তুলে ধরে সুচিন্তার চেয়ারপারসন বলেন, তিনি (ড. কামাল) বললেন, আমাদের সঙ্গে তারেক রহমানের সম্পর্ক নেই, জামায়াতের সম্পর্ক নেই। অথচ তারা একই মার্কায় নির্বাচন করছেন। জামায়াত এখন কলিজার মধ্যে ঢুকে গেছে বিএনপির। আবার বলে জামায়াত নাই। এই যে মিথ্যাচার, এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা।
ব্যাংকে অনিয়মের বিষয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ব্যাংক লুট হয়েছে। আমিও জানি ব্যাংকে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থাও তো নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। ঋণ খেলাপিসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের অবশ্যই গ্রেফতার করা হচ্ছে, বিচারও হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুকে কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, বিচারও চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) বলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। আসলে এখানে এফবিআই-কানাডা জড়িত। আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত চলছে। সময় সময় আপডেট তো আমরা পাচ্ছি। আসলে বিতর্কিত করার অংশ হিসেবেই তারা এ ধরনের মিথ্যাচার করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৮
টিসি/