প্রতীক পেয়ে প্রার্থীরা এলাকায় নেমে পড়েছেন, তাদের অনেকে পোস্টারও টানানো শুরু করেছেন। ফলে রাজধানীর নিজ নিজ আসনে চলছে লিফলেট বিতরণ আর ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়।
মঙ্গলবার ( ১১ডিসেম্বর) রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে নিজ বাসভবনের সামনে থেকে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট সমর্থিত গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি (জোনায়েদ সাকি)। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১২ আসনে তিনি কোদাল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ‘ভয়মুক্ত বাংলাদেশ, কার্যকর গণতন্ত্র, সকলের জন্য উন্নয়ন’ স্লোগান নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন জোনায়েদ সাকি।
সাকি ছাড়াও গণসংহতি আন্দোলনের আরও দুই নেতা- জুলহাসনাইন বাবু পাবনা-১ এবং হাসান মারুফ রুমি চট্টগ্রাম-১০ আসনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবার ১৯ দিন প্রচার কাজ চালানোর জন্য সময় পাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রচার কাজ বন্ধ করতে হবে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টায়। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টির সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে। ইতোমধ্যে সোমবার প্রার্থিদের প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৪টি প্রতীক সংরক্ষণ করেছে। এর মধ্যে ৩৯টি নিবন্ধিত দলকে দলীয় প্রতীক এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আলাদা প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা চূড়ান্ত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর প্রার্থী এবং তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাতে পারবেন। প্রচারের সময় আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ইসি ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি ভোটের মাঠে রয়েছে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি (ইলেক্ট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি)। এসব কমিটির কাছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নির্বাচনী অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জানাতে পারবেন।
নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচার কাজ শুরু করতে হবে। আর এটা বন্ধ করতে হবে ভোটগ্রহণ শুরু ৩২ ঘণ্টা আগে। অর্থাৎ ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত। সে হিসেবে এবার প্রার্থীরা ১৯ দিন প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবেন। নির্বাচনী পোস্টারের সাইজ দৈর্ঘ্যে ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার কোনভাবেই তিন মিটারের বেশি হবে না। পোস্টার রঙিন করা যাবে না। পোস্টারে প্রার্থী ছাড়া দলীয় প্রধানের ছবি ব্যবহার করা যাবে। পোস্টার দড়িতে ঝুঁলিয়ে প্রচার করতে হবে। ৪শ’ বর্গফুট এলাকার বেশি বড় কোএনা প্যান্ডেল করে প্রচার চালানো যাবে না। কাপড়ের তৈরি ব্যানার করে প্রচার চালানো গেলেও ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার করা যাবে না। জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধা হয়, এমন কোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে হবে। প্রচারের অংশ হিসেবে যে কোন প্রকার দেয়াল লিখন ও পোস্টার সাঁটানো দণ্ডনীয় অপরাধ।
মাইকে প্রচার চালানো যাবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। পাশাপাশি একই নির্বাচনী এলাকাতে কোনো অবস্থাতেই তিনটির বেশি লাউড স্পিকার ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনী এলাকায় প্রতি ইউনিয়ন আর পৌর এলাকার ওয়ার্ড প্রতি একটির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প করা যাবে না। মোটর সাইকেলসহ যে কোন মোটরগাড়িতে করে মিছিল, মশাল মিছিল বা শোভাযাত্রা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো প্রকার বিদ্যূতিক আলোকসজ্জা করা যাবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতীক হিসেবে জীবন্ত প্রাণীর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
প্রচারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অন্য কোন প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনা ব্যক্তি সম্মানহানীকর কিছু করতে পারবে না। উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্যও দেওয়া যাবে না। প্রচারণায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সব সুবিধা ত্যাগ করে প্রচার কাজে অংশ নিতে হবে। কোনো ডাক বাংলো, সরকারি গাড়ি ব্যবহারসহ প্রটোকল ছেড়ে এলাকায় যেতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ আইনে অনুমতি থাকায় নিরাপত্তার কারণে প্রটোকল পাবেন। দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কেউ হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না।
গত রোববার (৯ ডিসেম্বর) ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের ভোটের লড়াইয়ের জন্য এই এক হাজার ৮৪১ প্রার্থী টিকলেন। এবারের সংসদ নির্বাচনে মোট ৩ হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাকিদের মধ্যে কারও মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। কেউ কেউ নিজেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
জিসিজি/এমজেএফ