আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’র প্রার্থীদের সঙ্গে জেলার সাতটি আসনে মহাজোটের শরিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনে লড়তে দেখা যাচ্ছে। একই সঙ্গে দু’টি আসনে নিজ নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ‘উন্মুক্ত’ লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন ২০ দলের শরীক দলের প্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাজোটের দল জাতীয় পার্টির কিছু ভোট রয়েছে। তাই বাকি দলগুলোর ভোটে অংশ নিয়ে তেমন ‘টেনশন’ নেই প্রধান জোট ও দলের প্রার্থীদের।
তবে একটি আসনে নৌকার প্রার্থীকে ধানের শীষ সামলানোর পাশাপাশি বেগ পেতে হবে দলের শক্ত বিদ্রোহীকেও। জোটগতভাবে ‘সমঝোতা’ হওয়া আরেকটি আসনে লাঙলের প্রার্থীর জন্য রীতিমতো ‘গলার কাঁটা’ আওয়ামী লীগের পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান।
অন্যদিকে, ধানের শীষের প্রার্থীরা দু’টি আসনে হিসাবের বাইরেই রাখছে নিজেদের শরীক দলের প্রার্থীদের। এই নিয়ে তাদের কোনো ‘মাথাব্যাথা’ নেই।
জানা যায়, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন আহমেদ (নৌকা)। এই আসনে মহাজোটের দুই শরিক জাকের পার্টির গোলাম মোহাম্মদ (গোলাপ ফুল) ও তরিকত ফেডারেশনের প্রাণেশ চন্দ্র পন্ডিত (ফুলের মালা) ভোট করছেন।
মহাজোট থেকে জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমির ফয়সাল মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে নৌকা মার্কায় ভোটের মাঠে রয়েছেন তরিকতের নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। ওই সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাহ উদ্দিন মুক্তি। তবে এবার আসনটিতে নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।
ফলে জাতীয় পার্টির ‘উন্মুক্ত’ লড়াইয়ে এবারও প্রার্থী হয়েছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি (লাঙল)। আসনটিতে জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)।
ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন (নৌকা)। তবে আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রয়েছেন খন্দকার রফিকুল ইসলাম (লাঙল)।
এই আসনে জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। তিনি জোটের মনোনয়ন না পেয়ে সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
এই আসনে বিএনপির প্রার্থী শামছ উদ্দিন আহমেদ (ধানের শীষ)। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডির প্রার্থী চৌধুরী মোহাম্মদ ইসহাকও নির্বাচন করছেন, তার মার্কা তারা।
আসন ভাগাভাগিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনটি পেয়েছিলো জাতীয় পার্টি। কিন্তু এবার এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী (নৌকা)।
এই আসনে জোটগত মনোনয়ন না পেলেও লাঙল প্রতীক নিয়ে ভোট করবেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। তিনি ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছাড়াও তাকে আসনটিতে লড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদ হাসান সুমনের সঙ্গে। তার প্রতীক সিংহ।
সুমন শক্ত প্রার্থী হওয়ায় ফখরুল ইমামের নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেওয়া কঠিন হবে বলেই জানিয়েছেন স্থানীয় ভোটাররা।
একই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের এ এইচ এম খালেকুজ্জামান (ধানের শীষ)। এই আসনে ২০ দলের শরিক এলডিপির এম এ বাশার (ছাতা) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
আসনটিতে নির্বাচন করছেন এনডিএম’র চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন গণঐক্যের শরিক দল বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী সাইফ উদ্দিন আহমেদ মনি (হারিকেন)। মুসলিম লীগ এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিলো।
মযমনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুল আবেদিন (নৌকা)। এই আসনে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম (কুড়াল)।
আসনটিতে জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে রয়েছেন মো. হাসনাত মাহমুদ (লাঙল) ও মো. শফিকুল আলম (গোলাপ ফুল)। এই হিসেবে তুলনায় বিএনপির খুররম খান চৌধুরী রয়েছেন নিশ্চিন্তে।
ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে আওয়ামী লীগের কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু (নৌকা)। জাকের পার্টির প্রার্থী নাজমা আক্তার (গোলাপ ফুল)। যদিও জাকের পার্টির প্রার্থী নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা নেই নৌকার প্রার্থী ধনু’র। ইতোপূর্বে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বাংলানিউজে বলেন, মহাজোট ও দলের বাইরের প্রার্থী নিয়ে সেভাবে আমাদের কোনো টেনশন নেই। তবে মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে এখনও আলোচনা চলছে। আশা করি ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত তারা থাকবেন না।
যোগাযোগ করা হলে ময়মনসিহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা প্রার্থী দিয়েছে তারা অবশ্যই ঠিক করেনি। তবে এখনও তাদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। সময় হলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৮
এমএএএম/এমএ