কারণ মহাজোটের প্রার্থী হয়ে লাঙল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার। স্বভাবতই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও প্রতীক থাকার সুযোগ নেই।
এ অবস্থায় ধানের শীষের নেতাকর্মীরা রয়েছেন চরম হতাশায়। অথচ নির্বাচনের দিনক্ষণ দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু দলের প্রার্থীর পক্ষে চালাতে পারছেন না প্রচার-প্রচারণা। পারছেন না নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের পোস্টারিং সব মিলিয়ে আইনি জটিলতায় আটকে রয়েছে ধানের শীষ।
বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনের চিত্র এমন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। মহাজোট থেকে এই আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা-লাঙল প্রতীক) নেতা বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদারকে।
ওদিকে আইনি জটিতায় আটকে আছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী আব্দুল মোহিত তালুকদার। তিনি এখনো ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পাননি। অথচ নির্বাচনের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসায় সর্বত্রই চলছে নির্বাচনী ডামাঢোল। সর্বত্রই এখন আলোচনার বিষয় বস্তুই ভোটের হিসেব-নিকেষ। তবে নৌকা আর ধানের শীষ না থাকায় এই আসনে নির্বাচনী আমেজ খুব একটা নেই বলেই মত দেন স্থানীয় ভোটাররা।
রোববার (১৬ ডিসেম্বর) সরেজিমন ঘুরে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এমন চিত্র দেখা যায়।
দুপচাঁচিয়া থানা বাসস্ট্যান্ডের চা দোকানি আব্দুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মার্কা টাঙানো হয়েছে। চলছে মাইকিং। তবে এখনো মার্কা পাননি বিএনপির প্রার্থী। ফলে প্রচারে নামতে পারছে না দলটি। অথচ ধানের শীষের সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা লাঙলের’।
আরেক দোকানি রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, মহাজোট তথা জাপার প্রার্থী বর্তমান এমপির সঙ্গে স্থানীয় মহাজোটের নেতাকর্মীদের খানিকটা দূরত্ব রয়েছে। এতে লাঙল প্রতীকের পক্ষে মহাজোটের সিংহভাগ নেতাকর্মী এখনো মাঠে নামেনি। ওদিকে বিএনপির প্রার্থী এখনো প্রতীক বরাদ্দ পাননি। ফলে এ আসনে এখন পর্যন্ত (রোববার ১৬ ডিসেম্বর) লাঙল ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চলছে।
রেজাউল করিমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে শ্রমিক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনী আমেজ বলতে যা বোঝায় তা এখনো পর্যন্ত এ আসনে দেখা যাচ্ছে না। ধীনের শীষের প্রার্থী মাঠে না নামতে পারলে এ আসনে নির্বাচন জমবে না বলেও মনে করেন এই শ্রমিক।
এদিকে ধানের শীষের দুর্গখ্যাত এ আসনটির বিএনপির কর্মী নুরুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘নিজ দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য অনেকদিন হলো অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমার দলের প্রার্থী আইনি সমস্যার কারণে এখনো ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ পাননি। ফলে প্রচার-প্রচারণা করতে পারছি না। শেষমেষ ভোট দিতে পারবো কী-না তা নিয়েও চিন্তায় আছি।
এক কথায় এ আসনে ধানের শীষের ভোটারদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে বলেও মত দেন বিএনপির কর্মী রেজাউল করিম বাবলুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা এ আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ফলে এ আসন থেকে জাপার প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার নির্বাচিত হন।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত (বর্তমানে পলাতক) আব্দুল মোমেন খোকা, তার স্ত্রী মাসুদা মোমেন ও খোকার ছোট ভাই আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোহিত তালুকদারকে দলীয় মনোনয়নপত্র দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই বাছাইকালে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করায় আব্দুল মোহিত তালুকদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এ কারণে বিএনপি থেকে মাসুদা মোমেনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে প্রতীক বরাদ্দের আগের দিন উচ্চ আদালত থেকে আব্দুল মোহিত তালুকদার তার প্রার্থীতা ফিরে পান।
পরে মাসুদা মোমিনের মনোনয়ন বাতিল করে বিএনপি আবারো আব্দুল মোহিত তালুকদারকে মনোনয়ন দেয়। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের দিন নির্বাচন কমিশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আপীল বিভাগ আব্দুল মোহিত তালুকদারকে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। এতে এ আসেন প্রতীক বরাদ্দ স্থগিত রাখেন জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
এমবিএইচ/আরএ