শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি নবীগঞ্জে অবস্থান নিয়ে ওসমানী রোড, শেরপুর রোড, হাসপাতালে রোডসহ বিভিন্ন স্থানে রেজা কিবরিয়ার ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। এসময় এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সুজাত মিয়াসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এলাকায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া। অতীতে বাবা হত্যার দায়ে বিএনপিকে ঘৃণা করলেও এবারের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে এসেছেন তার ছেলে রেজা কিবরিয়া পুরো জেলাজুড়ে এ নিয়ে চলে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। আওয়ামী লীগেও দেখা দেয় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি মেয়র আরিফ সিলেট থেকে এসে রেজা কিবরিয়ার প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়টিও নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু বলেন, যাদের মাঠের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাব রয়েছে তাদের দ্বারাই সম্ভব আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া। রেজা কিবরিয়া এক সময় বিএনপির মালিকানাধীন ব্যবসা থেকে কেনাকাটা না করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এখন তিনি ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তার কাছে বাবা হত্যাকারীদের শাস্তির চেয়েও বড় বিষয় সংসদ সদস্য হওয়া।
‘ক্ষমতার লোভ তাকে অন্ধ করেছে । এক সময় ঠিকই তার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং এই কর্মের জন্য অনুসূচনায় ভুগবেন। ’
এ ব্যাপারে ড. রেজা কিবরিয়ার মোবাইল ফোনে বারবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলীও এতে নিহত হন।
বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির এমপি গুরুতর আহত হন। এছাড়াও আহত হন প্রায় ৭০ জন। এখনও তারা আঘাতের যন্ত্রণা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনার পরদিন আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দু’টি মামলা করেন।
পরে মামলা দু’টি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ফের সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়াসহ আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মাওলানা শেখ আবদুস সালামকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে ২০০৫ সালের ১৮ মার্চ প্রথম দফায় ১০ জনের বিরুদ্ধে ও দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ জন থেকে বাড়িয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দু’জন ভারতে মারা গেছেন। আর তৃতীয় দফায় আসামির সংখ্যা আরও নয়জন বাড়িয়ে এ মামলায় মোট আসামি করা হয় ৩৫ জনকে।
সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সুজাত মিয়া ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে এ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় শুরুতে কাজ না করলেও শুক্রবার সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে প্রচারণা চালান। তিনি বলেন, ধানের শীষের পক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
এএ