ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের নেতা ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চর্চা কেন্দ্র।

বঙ্গবন্ধুসহ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর তুলনা বঙ্গবন্ধু নিজেই। তিনি সারাবিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা। তিনি নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত মানুষের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণেই বলেছিলেন, ‘আজ সমগ্র বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষিত-বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষ; অন্যদিকে শোষণকারী। আমি শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে’।

বঙ্গবন্ধুর এ সহচর বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, নেতা জন্মদিনে আপনার চাওয়া কী? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন। ’ আজকের দিনটি কীভাবে উদযাপন করবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তো কোনো জন্মদিন পালন করি না, কেক কাটি না, মোমবাতি জ্বালাই না। যে বাংলার মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায় তাদের নেতা হয়ে আমি জন্মদিন পালন করতে পারি না। ’

আওয়ামী লীগের এ প্রবীণ নেতা আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার জন্যই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। শিশু রাসেলকে কেন হত্যা করেছিল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি? হত্যা করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো উত্তরসূরী যেন কোনো দিন রাষ্ট্রক্ষমতায় না আসতে পারে সেজন্য। তবে আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চারবারের সফল প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে যারা জড়িত ছিল সবার মুখোশ উন্মোচনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন করা দরকার।  

শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়ার স্মৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সুভাষচন্দ্র বসু ‘নেতাজি’ উপাধি জনগণের মুখে মুখে পেয়েছিলেন। চিত্তরঞ্জনকেও ‘দেশবন্ধু’ উপাধি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু প্রথম একটি জাতির পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। সেদিন জনসভায় ১০ লাখ লোক উপস্থিত ছিলেন। ১০ লাখ মানুষের ২০ লাখ হাত উত্তোলন করে সম্মতির মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়। ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়ার পর সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘তোমরা আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছো, আমি যদি কোনো দিন সুযোগ পাই, আমার রক্ত দিয়ে এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করবো। ’ তিনি শুধু নিজেই নন, সপরিবারে রক্ত দিয়ে বাঙালির ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে না থাকলেও, যতদিন বাঙালি এবং বাংলাদেশ থাকবে ততদিন তিনি আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় বসবাস করবেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের গুণাবলীর কথা উল্লেখ করে সাবেক মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে সাত কোটি বাঙালিকে একটি মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি এই ভাষণ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।  

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলার দুঃখী মানুষ বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের মণিকোঠায় সবসময় বসবাস করতো। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগারের যে সেলে রাখা হয়েছিল, সেই সেলের সামনে বঙ্গবন্ধুর জন্য একটি কবর খোঁড়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সেই কবর দেখে হেসে বলেছিলেন, ‘আমিতো জানি তোমরা আমাকে ফাঁসি দেবে। আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। বাংলার দামাল ছেলেরা যখন হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে শিখেছে, তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই দমিয়ে রাখে। তবে তোমাদের কাছে অনুরোধ, তোমরা আমাকে এই কবরে কবর দিয়ো না, আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ো। ’ 

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি শাহ মুরাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী শাহ আব্দুল মোছাব্বির প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৯
আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।