সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক ভরাডুবির পর রাজনীতির মাঠে আর জামায়াতকে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি জোটের প্রধান দল বিএনপির কোনো কর্মসূচিতেও তাদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
সর্বশেষ গত ১ সেপ্টেম্বর (রোববার) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সব দলের নেতারা উপস্থিত হলেও ছিল না জামায়াত ও নাগরিক ঐক্যের কেউ-ই।
এর মাঝে সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেপথ্যে থাকা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আকারে ইঙ্গিতে বরাবরই বিএনপিকে বলছেন, ‘জামায়াত সম্পর্কে এখনই সিদ্ধান্ত নিন। ’ তবে এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও কিছু খোলাসা করা হয়নি।
গত ৩১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সময় এসেছে জামায়াত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে জামায়াতের বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
জানা যায়, ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি আগেই জোট ছেড়ে গেছে। বাকি ১৯ দলের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ জোট ছাড়লেও ন্যাপের নেতা শাওন সাদেকী ভগ্নাংশ নিয়ে জোটে রয়ে গেছেন।
আর এনডিপির গোলাম মোর্তুজা জোট ছেড়ে যাওয়ার পর ক্বারি আবু তাহেরের নেতৃত্বে একটি অংশ এখনও ২০ দলে আছে। তবে এই দুই দলের কাউকে বিএনপির ওই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
এসব ছোট দল না এলেও অধিকাংশ দল আসার কারণে প্রশ্ন উঠেছে সবচেয়ে বড় শরিক জামায়াতে ইসলামী কেন আসছে না? নাকি তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নও যখন সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন জোট নেতারা বলছেন, জামায়াতকে বাদ দেওয়া হয়নি, জামায়াত জোটেই আছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, জামায়াত মূলত অনেকদিন থেকেই প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশে যোগ দেয় না। তবে জোটের মিটিংয়ে নিয়মিত যোগ দেয় তারা।
‘জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়া হয়নি। আবার জামায়াতও জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়নি। সুতরাং এ প্রশ্নের কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না,’ এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন তিনি।
নাগরিক ঐক্যের কেউ আসেননি- এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আলোচনা সভায় দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। তিনি হয়তো কোনো সমস্যার কারণে আসতে পারেননি।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জোটেই আছি। তবে এ ধরনের আলোচনা সভায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের সমস্যা আছে।
দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল কি-না এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে মাওলানা হালিম বলেন, সেটা বিএনপিকেই জিজ্ঞাসা করেন।
তবে বিএনপির প্রোগ্রামের দাওয়াত পেলেও অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম কিছুদিন আগে জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গড়েছেন।
তারা এই ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানও করছেন। জোট ছেড়েছেন কি-না এমন জবাবে অলি আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘জোটের কার্যক্রম অনেক দিন ধরেই নেই। তবে আমরা জোটে আছি।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ওই আলোচনা সভায় তাদের দু’জনের কাউকে দেখা যায়নি। তবে এই দুই দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও এমএম আমিনুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিএনপির আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, যারা জোট নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছেন, তারা শিগগিরই জোট আছে কি নেই- তা দেখতে পাবেন।
‘জোট নিয়ে কোনো রকমের কথায় আপনারা পাত্তা দেবেন না,’ বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৯
এমএইচ/এমএ