শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় রাজধনীর ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের স্মরণসভায় তিনি একথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ১৯৬৯ সালে আমরা যখন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, (মেনন ও মতিয়া গ্রুপ), এবং জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন ১১ দফা প্রণয়ন করি, তখন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্যার আমাদের বুকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, আমরা সমর্থন দিলাম।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাঙালি এবং বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে মোজাফফর আহমদের নাম লেখা থাকবে। তিনি একজন সৎ-আদর্শ ও নীতিবান রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মতো সৎ রাজনীতিবিদ পাওয়া খুবই কঠিন। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেই সিদ্ধান্তে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটল থাকতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মোজাফফর আহমেদের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি যখন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলাম তখন দেখেছি, প্রায়ই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তারা একে অপরের দুই বছরের ছোট-বড় হলেও সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত আন্তরিক। তারা একে-অপরকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে কথা বলতেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু যেদিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি লাভ করেন, তার পরের দিন আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাকে গণসংবর্ধনা দেই। সংবর্ধনা দেওয়ার পরের দিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের গোলটেবিল বৈঠকে গেলেন। একই বৈঠকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদও যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকে ৬ দফা এবং ১১ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করলেন, সেটা গৃহীত না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু সেই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এলেন। আমাদের স্যার অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে দুইজন মানুষের নাম উল্লেখ করেছিলেন। তার মধ্যে একজন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। আর আমাদের কিংবদন্তি নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত শোষনহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি কখনো সাম্রাজ্যবাদীর সঙ্গে আপস করেননি। তিনি জীবনে কোনোদিন সমাজতন্ত্রের প্রশ্নে আপস করেননি। তিনি ছিলেন একজন আপসহীন নেতা।
‘একটা কথা মনে রাখা দরকার। যিনি সম্মানিত তিনি সব সময়ই সম্মানিত। ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীত করা হলে তিনি বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, পদক পাওয়ার জন্য তো রাজনীতি করিনি। তিনি লোভ-লালসার কাছে কখনোও পরাজিত হন নাই। ’
বর্তমান রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলবেন। আসলেই তিনি সেটি করতে সক্ষম হয়েছেন। ইদানিং পত্র-পত্রিকার পাতা খুললে টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের খবর দেখা যায়। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি ছিলাম, ইকবাল হলের ভিপি ছিলাম। কিন্তু আমি এখনও জানি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন কোথায়। ছাত্র জীবনে আমরা একটি সৎ আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেছি। বর্তমান সময়ে সৎ রাজনীতিবিদের অভাব দেখা যাচ্ছে। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ছিলেন সৎ রাজনীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
স্মরণসভায় আরও আলোচনা করেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, মোজাফফর আহমদের মেয়ে আইভি আহমদ, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইদুজ্জামান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ হাসানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মোজাফফর আহমদ স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে দু’টি রবীন্দ্র সংগীত ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু’ ও ‘তোমারও অসীমে প্রাণমন লয়ে’ পরিবেশন করা হয়।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কার্যকরী সভাপতি আমেনা আহমদ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
আরকেআর/এসএ