যেখানে অন্যায় যেখানেই অনিয়ম সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সে বা তারা কে কোন দলের, কে কোন মতের সেটি দেখা হচ্ছে না।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল চারটায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে আন্তঃস্কুল জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র দেশের ৪৮টি বিদ্যালয়ের বিতর্ক দল নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্র বড় কাজ হাতে নিয়েছে। প্রতিযোগিতা যেন চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি জাতীয় টেলিভিশন কেন্দ্র। দেশে অনেক টেলিভিশন থাকলেও সবাই বিতর্ক প্রতিযোগিতা করে না।
যুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠনে বিশ্বাস করি। বিতর্ক ছাড়া সেটি সম্ভব নয়। স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা এক্ষেত্রে সহায়ক। তাদের পরিশীলিত করতে ভূমিকা রাখবে।
আমি মনে করি শুধু মেধা বিকাশে ভালো মানুষ গড়া সম্ভব নয়। শিক্ষক অভিভাবকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি শিক্ষকদের অনুরোধ জানাবো, আমরা উন্নত দেশ রচনা করতে চাই। ১০-১৫ বছর পর এ শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমের বীজ বপন করতে হবে। সাড়ে সাত বছর বয়সে বাবা ওয়াদা করিয়েছিলেন, জীবনে সিগারেট না খাওয়ার। আমি সেই ওয়াদা রেখেছি। আমি জীবনে তাস খেলিনি। শিখিইনি। তোমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হবে না। বিল গেটস তার সন্তানদের ১৬ বছরের আগে স্মার্টফোন দেননি। আমাদের অনেকে আইফোন কিনে দিই। সন্তানের বায়না পূরণ করি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, অনেক সময় শুনি ছেলেরা বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী হচ্ছে। কিন্তু মা বাবার খবর নিচ্ছে না। তোমরা মনে রাখবে, মা বাবা কোলে পিঠে মানুষ করেছে। তোমরা যখন বড় হবে তখন তারা তোমাদের সন্তানের মতো হয়ে যাবে। তাদের সেবা করবে।
তিনি বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম তখন দেশে একটি টেলিভিশন ছিল। সেখানে বিতর্ক ছিল প্রেসট্রিজিয়াস। আমার হলের পক্ষ থেকে সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। অনেক বছর, দেড় দশক বন্ধ ছিল। আমাকে প্রধানমন্ত্রী তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর আবার চালু করেছি। বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রও বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে যাতে ঢাকারও কয়েকটি বিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল হক ও মো. নুরুল করিম।
সভাপতিত্ব করেন বিটিভির মহাপরিচালক এসএম হারুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় অপেক্ষায় থাকি। সুন্দর সমাজের, মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকি। স্বাধীনতার সুফল হচ্ছে মুক্তি। জাতির অগ্রযাত্রা উপভোগের জন্য চাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করা। আমাদের মূল কাজ এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দেওয়া। চট্টগ্রাম কেন্দ্র দেশের সব মানুষের টেলিভিশন।
আফরোজা চৌধুরী দিনার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য।
ওয়াসিকা আয়েশা খান বলেন, যুক্তি দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায়। যৌক্তিক প্রজন্ম বিপথে যেতে পারে না। ইন্টারনেটে প্রচুর তথ্য আদান প্রদান হয়। সব তথ্য যৌক্তিক নয়। যারা যুক্তিবাদী তারা বিতর্কিত ইতিহাস বিশ্বাস করে না, সাম্প্রদায়িক হয় না, জঙ্গিবাদে বিপথে পা বাড়ায় না। তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়।
মো. নুরুল করিম বলেন, আউটডোরে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ঢাকায়ও হয়নি, চট্টগ্রামে প্রথম হচ্ছে। বিতর্ক গ্রিক সময়ের। গুরু শিষ্যের মধ্যেও বিতর্ক হতো। বিতর্ক শিক্ষার্থীদের মেধার উৎকর্ষ ঘটাবে।
নিতাই কুমার ভট্টাচার্য বলেন, এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান সম্প্রচারে যাচ্ছি আমরা। বিতর্ক হচ্ছে মুক্তবুদ্ধির চর্চা। শিক্ষার্থীরা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে নিজেদের শাণিত করবে।
শুরুতে ছিল জাতীয় সংগীত। এরপর 'ধন ধান্য পুষ্পভরা', 'মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল, বাংলাদেশের বুক এতই বিশাল', 'লাল সবুজের বিজয় নিশান' গানের সঙ্গে বর্ণিল নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির খুদে নৃত্যশিল্পীরা। পুরো আয়োজনে সহযোগিতা করে দৃষ্টি চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
এআর/টিসি