বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন জানিয়ে তার মুক্তির দাবির সঙ্গেও একমত পোষণ করেন দেশের সংবিধান প্রণেতা এই আইনজীবী।
রোববার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবি ও নাগরিক শোকর্যালি আগে সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
সময় থাকতে মাথা ঠাণ্ডা করে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, আপনারা যা করছেন এসব করে বার বার পার পাবেন না। আপনারা দ্রুত সরে যান। দেশের মালিক জনগণ। তাদের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেন।
কুষ্টিয়ায় বুয়েটছাত্র ফাহাদের বাড়িতে যাওয়ার সময় বিএনপি নেতাদের বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ড. কামাল বলেন, যারা সেদিন বাধা দিয়েছিলেন তাদের সবার তালিকা করে রাখেন। এসব সাংবিধানিক অধিকারে বাধাদানকারীদের কড়া শাস্তি হবে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে যেভাবে হত্যা করা হলো এরা কী মানুষ? প্রশ্ন করে ড. কামাল বলেন, এই ছেলেদের পশু বানানো হচ্ছে কেন? কারা এদেরকে পশু বানাচ্ছেন? যারা মানুষকে অমানুষ বানাচ্ছেন, আপনাদের কী শাস্তি হবে সেটা চিন্তা করেন। কোনো ছেলে পশু হয়ে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয় না। যেসব লোক মানুষকে পশু বানাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করুন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশ এখানে কতিপয় লোককে রাষ্ট্রক্ষমতার প্রশ্রয় দিয়ে পশু বানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে দলের নামে এখন দেশ শাসন করছে এই দলে তো আমরাও ছিলাম। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম। তাজউদ্দীন, নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে। সেই দলের নামে যে কাজগুলো হচ্ছে সেটাতে বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, নজরুল ইসলামকে অসম্মান করা হচ্ছে। অসম্মান করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও।
আবরারকে যারা হত্যা করেছে তারা কার আদর্শের অনুসারী প্রশ্ন করে ড. কামাল বলেন, যিনি দেশ শাসন করছেন তার আদর্শের অনুসারী। এই কী আপনার আদর্শ? এই যদি আপনার আদর্শ হয়ে থাকে তাহলে আর এক মুহূর্তও আপনার সিংহাসনে থাকা উচিত না।
ড. কামাল বলেন, এই জনসভায় যারা আছেন সবাই বলছে আল্লাহর ওয়াস্তে আপনি দেশ শাসন করা থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচন হোক। দেশ শাসন দেশের মানুষই করবে। সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা ঠিক করবে কে দেশ শাসন করবে।
ড. কামাল আরও বলেন, খালেদা জিয়ার বেঁচে থাকা নিয়ে সবাই আশঙ্কা করছেন। তিনি বিরোধীদলের নেতা ও তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। অসুস্থ হওয়ার পরে ওনাকে মুক্ত করা হবে না, তিনি চিকিৎসা পাবেন না এটা আমাদের সভ্যতা ও সংবিধান বিরোধী। আমি তার মুক্তির বিষয়ে সবার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করছি।
নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর সঞ্চালনায় শোকর্যালি আগে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডি সহ সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যর উপদেষ্টা এসএম আকরাম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির মহানগর দক্ষিণের সহ সভাপতি নবী উল্লা নবী, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আগামী ১৮ অক্টোবর আবরার হত্যার প্রতিবাদে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে রাজধানীর যেকোনো স্থানে নাগরিক শোকসভা হবে।
পরে একটি শোকর্যালি প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ হাইকোর্ট মোড়ে তাদের আটকে দেয়। সেখানে দাঁড়িয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আগামী ২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সভা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
এমএইচ/এএটি