মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয় তাকে। এক ঘণ্টা পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাফুজ্জামান আনছারীর আদালতে তাকে রমনা থানায় হওয়া অস্ত্র ও মাদক আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর কিছুক্ষণ পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে দুই মামলায় সম্রাট ও তার সহযোগী যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। প্রথমে অস্ত্র মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ঢাকার মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু। এ মামলায় রিমান্ড চেয়ে পুলিশের ফরোয়ার্ডিং পড়ে শোনান তিনি।
শুনানির শুরুতেই সম্রাটের আইনজীবীরা বলেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। গ্রেফতারের পরও তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের আইসিওতে ভর্তি ছিলেন। এখন আদালতকক্ষে ব্যাপক গরম। সম্রাট একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং রাজনীতিবিদ। তাই তিনি এখান থেকে পালিয়ে যাবেন না। তার হাতকড়া খুলে দেওয়া হোক।
এসময় পেছনে থাকা অন্য আইনজীবীরাও হইচই শুরু করেন। তবে বিচারক এ প্রসঙ্গে কোনো রুলিং না দিয়ে রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করতে বলেন। এরপর তার আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি করেন।
এরপর সম্রাটের পক্ষে গাজী জিল্লুর রহমান, আব্দুল কাদেরসহ একে একে পাঁচ-ছয়জন আইনজীবী শুনানি করেন। তারা মামলার এজাহারে বর্ণিত অভিযোগে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। তার আইনজীবীরা বলেন, সম্রাট একজন রাজনীতিবিদ। তিনি কখনও এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন না। পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও তিনি কখনও করেননি। সম্রাটের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সফলতায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগের সঙ্গে জড়িয়েছে।
অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে তারা বলেন, আবেদনে বলা হয়েছে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, এটার রহস্য উদঘাটন প্রয়োজন। অস্ত্র যদি উদ্ধারই হয়ে থাকে এখানে আর কী রহস্য আছে যে উদ্ধার করতে হবে। তাই এ মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তারা সম্রাটের অসুস্থতা ও একটি বাল্ব প্রতিস্থাপন করার প্রসঙ্গও আদালতের নজরে আনেন। তাই প্রয়োজনে সম্রাটকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়ার কথাও বলেন।
এরপর মাদক মামলার শুনানি শুরু হয়। পিপি আব্দুল্লাহ আবু এ মামলায়ও ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার ফরোয়ার্ডিং পড়ে শোনান।
এই মামলায়ও সম্রাটের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তারা বলেন, সম্রাটের বাসায় অনেক নেতাকর্মী আসে। সম্রাটকে আগের দিন ধরা হলো, পরদিন তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। আর সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বিদেশি মদ। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, কেউ কী ধরা পড়ার পর তার বাসায় মদ রেখে দেবে? অভিযান চলাকালে অন্য ক্ষেত্রে আগে থেকে মিডিয়াকে অনুমতি দেওয়া হয়। আর সম্রাটের ক্ষেত্রে ছয় ঘণ্টা পর সেখানে মিডিয়া প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এটি কেন করা হলো?
তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রবেশের সময় কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ করলেও তারা বের হওয়ার সময় খালি হাতে বেরিয়েছেন। সেই ব্যাগে কী ছিল আমরা জানি না। তবে আগের দিন আসামি গ্রেফতার হয়েছে জেনেও তার পরিবার বাড়িতে মদের বোতল রেখে দেওয়া হবে এটি একটি হাস্যকর কথা।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদেশ লেখার জন্য পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে খাস কামরায় চলে যান বিচারক। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদালত পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দুই মামলায় সম্রাট ও আরমানের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ পড়ে শোনান। আদেশে রিমান্ডের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবদের নির্দেশও দেওয়া হয়।
এদিকে সম্রাটকে হাজির করার কথা থাকায় সকাল থেকেই তার সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে সিএমএম কোর্টের সামনে সর্বসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে নেওয়া হয় সম্রাটকে। রিমান্ডের আদেশের পর সম্রাটকে নিয়ে বের হওয়ার সময়ও ছিল নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের হট্টগোল। পরে একটি গাড়িবহরসহ সম্রাটকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে।
গত ৫ অক্টোবর গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ওই গ্রামের জামায়াত নেতা মনির চৌধুরীর বাড়ি থেকে সম্রাট ও আরমানকে আটক করা হয়। পরদিন তাদের নিয়ে রাজধানীতে নিজ নিজ বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব।
এছাড়া মদ্যপ অবস্থায় পেয়ে আটকের সময়ই আরমানকে ছয়মাসের কারাদণ্ড দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। আর কাকরাইলের কার্যালয়ে বন্যপ্রাণীর চামড়া সংরক্ষণের দায়ে সম্রাটকেও একই মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এরপর সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আর আরমানের জায়গা হয় কুমিল্লা কারাগারে। কারাগারে থাকাকালে গত বুকে ব্যথা নিয়ে ৮ অক্টোবর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউকে ভর্তি হন সম্রাট। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে ১২ অক্টোবর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
দুই মামলায় সম্রাটের ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
কেআই/এএ