তিনি বলেছেন, আমি আপনাদের তিনটি প্রশ্ন করতে চাই। একটা হচ্ছে-আপনারা যে এত সংগ্রাম করলেন, আন্দোলন করলেন, এই অবিশাস্য নির্বাচনের পরে হঠাৎ করে আপনারা চুপসে গেলেন কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন-দুই কোটি টাকা ব্যাংকে থেকে চার-সাড়ে চার কোটি টাকা হয়েছে এ রকম একটা মামলায় আপনাদের দলের নেত্রী (খালেদা জিয়া) ধুঁকে ধুঁকে জেলখানায় মরছে আপনারা রাতে ঘুমান কিভাবে? আর তৃতীয় প্রশ্ন হলো-আপনাদের নেত্রী সব দুঃশাসন অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়ে বারবার বিজয়ী হয়েছেন।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এটা খুবই স্পষ্ট যে, আবরার ফাহাদ মারা গেছে দেশের পক্ষে কথা বলার জন্য। কোনো খুনির পক্ষে এটা বলা সম্ভব না যে, দেশের এবং ভারতের বিপক্ষে কথা বলেছে সেজন্য তাকে মেরেছে। সেজন্য একটা ট্যাগ লাগানো দরকার। সেই ট্যাগটা কী? সে জামায়াত-শিবির। এখন এই ট্যাগ কী শুধু আবরার ফাহাদকে লাগানো হয়েছিল? বাংলাদেশের বহু মানুষকে লাগানো হয়েছে। বহু ছাত্রাবাসে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু ছাত্রকে পিটিয়ে হল ছাড়া করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া করা হয়েছে। কাউকে মেরে ফেলা হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রফেসর আসিফ বলেন, যারা এখানে আছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই ট্যাগটা লাগানো কেন সম্ভব হলো? আমি পত্রিকায় অসংখ্যবার পড়েছি ছাত্রলীগ জামায়াত-শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারা ফেসবুকে বলেছে, আমি পিটিয়ে বের করে দিয়েছি। এই যে নিউজগুলো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আপনারা একজনেও কী কোর্টে গিয়ে বলেছেন?
‘শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশে যে সোপর্দ করা হলো এটা কি বাংলাদেশের আইনে আছে? বাংলাদেশে কি কোনো আইন আছে- যদি শিবির বা জামায়াত হয় তাকে পিটানো যাবে, জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে, তাকে মেরে ফেলা যাবে, তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া যাবে? আমার কথায় কেউ ভাববেন না- আমি শিবিরের প্রতি ভালোবাসা থেকে এটা বলছি। আমি বলছি শিবির সন্দেহে যারা মার খেয়েছে ভিকটিম হয়েছে তাদের প্রতি ভালোবাসা থেকে।
‘আমি বলছি শিবির সন্দেহে যাদের খুনি বাহিনী বানানো হয়েছে তাদের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে। একটা সভ্য দেশে দিনের পর দিন এই ধরনের নিউজ ছাপা হয়েছে। কোনোদিন কোনো মানবাধিকার কর্মী, কোনো আইনজীবী কোনো আদালতে প্রশ্ন তুলেন নাই, দেশের আইনে এই ব্যবস্থা আছে কি না!’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়নি। কারও মোবাইল ফোন ল্যাপটপ চেক করার ক্ষমতা ছাত্রলীগকে দেওয়া হয়নি। কেউ শিবির কি না সেজন্য পেটানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। হল থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তারা যদি জানতে পারে নিষিদ্ধ সংগঠনের হয়ে কেউ কাজ করছে পুলিশের কাছে তারা ইনফর্ম করতে পারবে, প্রভোস্টের কাছে ইনফর্ম করতে পারবে। এছাড়া আর কোনো কিছু করার আইন বাংলাদেশ নাই।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এখন অপেক্ষা করছি অনিক সরকারসহ ১৯ জনের যেন ফাঁসি হয় সেজন্য! কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই অমিত সরকারদের কে খুনি বানিয়েছে? আমরা যখন দেখলাম একজন ভ্যানচালকের ছেলে আকাশ নটরডেম কলেজের ছাত্র। জানেন একজন নটরডেম কলেজের ছাত্র কত ভদ্র হয়?
‘সেই বাবা ধারণ করতে পারছে না যে তার ছেলে খুনি হয়ে গেছে। এই যে ছাত্রলীগ নামের কিলিং মেশিন এটা বানিয়েছে কে? এদের দায়মুক্ত কারা রেখেছে?’
প্রফেসর আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি আমলে, জাতীয় পার্টির আমলে টর্চার হতো না এটা ঠিক না। কিন্তু এই মাত্রায়? এই ফ্রিকোন্সিতে? এত ভয়াবহভাবে? এত ঘন ঘন?
বাংলাদেশ নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহাবুব হোসেন, নিতাই চন্দ্র রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, ঢাবির অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এমএইচ/এমএ