তবে জোটের নেতারা বলছেন, সাবেক মন্ত্রী ও জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতা রাশেদ খান মেননের বক্তব্যে ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষুব্ধ। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা উঠতেই তিনি এসব কথা বলছেন।
গত ১৯ অক্টোবর বরিশালে পার্টির জেলা সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘… আমি সাক্ষী দিয়ে বলছি, আমি জনগণ, সেই জনগণ, তারা ভোট দিতে পারে নাই। ইউনিয়ন পরিষদে পারে না, উপজেলা পরিষদে পারে না। ’
মেননের এই বক্তব্যে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফেসবুকসহ সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাশেদ খান মেননকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
এরই মাঝে রোববার (২০ অক্টোবর) ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছে। আমার বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে উপস্থাপন না করে অংশ বিশেষ উপস্থাপন করায় এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ’
যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বক্তব্যের ভিডিওসহ সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
সম্প্রতি শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সন্ধান পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ক্লাবের চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন।
এরপর থেকে আলোচনায় আসা অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে তার আর্থিক সংশ্লষ্টতার অভিযোগ উঠে। যা বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমেও এসেছে। তবে বরিশালের সম্মেলনে এই বক্তব্যের পর ক্যাসিনোর সঙ্গে তার আর্থিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আরও জোরালোভাবে প্রচারে এসেছে।
রাজনৈতিক একাধিক সূত্র বলছে, গত নির্বাচনের পর এবারও তিনি সরকারের মন্ত্রী হবেন-এমন প্রত্যাশাই ছিল রাশেদ খান মেননের। কিন্তু তাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে তিনি কিছুটা হতাশ।
‘মন্ত্রিত্ব পেলে মেনন কী এ বক্তব্য দিতেন,’ কি না তা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
মেননের এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলানিউজকে বলেন, তিনি (মেনন) একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। তিনি কিভাবে এ কথা বলতে পারেন? এটা খুবই দুঃখজনক।
‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তিনি এ ধরনের কথা বলেছেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এ নিয়ে আমরা ১৪ দলে আলোচনা করবো, তার কাছে ব্যাখা চাইবো। ’
এ বিষয়ে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা তিনি কিভাবে বলেন জানি না। তবে তিনি যদি এটা মনে করে থাকেন, তাহলে সংসদ থেকে তার পদত্যাগ করা উচিত। তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। ’
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন রাশেদ খান মেনন।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং ওই নির্বাচনেও তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকায় নিয়ে সংসদ সদস্য হন।
এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি ৫ বছর মন্ত্রী ছিলেন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকে ফের এমপি হন তিনি। বর্তমানে মেনন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
এ অবস্থার তার এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, তিনি (মেনন) যা বলেছেন, তা যদি ঠিক হয় এবং তিনি যদি এতই গণতন্ত্রী হন তাহলে তো তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতেন না। তিনি এমপি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পাওয়ার জন্য তদবিরও করেছেন।
‘সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে গাড়িতে ফ্ল্যাগ লাগিয়ে ঘুরছেন। এই সময়ে এসে তিনি একথা বলছেন কেন? সম্রাটের (যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট) ক্যাসিনোতে তার নাম এসেছে, তাই তিনি এসব কথা বলছেন। ’
তিনি বলেন, রাশেদ খান মেননের এই বক্তব্য কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে মেননের এই বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
তিনি বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে রয়েছি। একঘণ্টা পর কল দিতে পারেন।
একঘণ্টা পর বারবার তার মোবাইল ফোনে কল দেওয়অ হলেও তা রিসিভ করেননি হাসানুল হক ইনু।
এ বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে জানিয়েছেন ১৪ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়াও।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
এসকে/এমএ