ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

জাতীয় পার্টির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে আ. লীগের

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১০
জাতীয় পার্টির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে আ. লীগের

ঢাকা: ক্ষমতায় মহাজোট সরকারের যতোই সময় পার হচ্ছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে ততোই দূরত্ব বাড়ছে আওয়ামী লীগের। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তির সংযোগ না ঘটায় মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের ওপর জাতীয় পার্টির আস্থা কমছে বলেও জানিয়েছে দলীয় সূত্র।



জাতীয় পার্টির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেছেন, দলের চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে আওয়ামী লীগের। রাষ্ট্রপতি বা বিশেষ দূত হতে না পারায় এরশাদ ও তার অনুসারিদের মনে পুঞ্জিভূত অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে বলেই আভাস দিচ্ছে দলীয় সূত্র। তবে কোনো নেতাই প্রকাশ্যে এই টানাপোড়েনের কথা স্বীকার করতে নারাজ।

এদিকে হাইকোর্ট সংবিধানে সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করায় সামরিক শাসক হিসেবে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগে বেকায়দায় পড়েও এরশাদ মহাজোটের সঙ্গে থাকার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ভিতরের চিত্র ভিন্ন বলেই জানিয়েছেন অনেক নেতা কর্মী। নেতা-কর্মীদের মাঝেও বাড়ছে আওয়ামী লীগ বিরোধী ক্ষোভ।

কিছু না পাওয়ার অভিমান নিয়ে এরশাদ নিজেও গত কয়েক মাস ধরে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিলেন। এমনকি মহাজোটের অনেক অনুষ্ঠানেও এরশাদকে অনুপস্থিত দেখা গেছে। কিন্তু সপ্তম সংশোধনী বাতিলের পর নিজের ভবিষ্যত বিপদের কথা চিন্তা করেই হয়তো সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এইচ এম এরশাদ। ওই সাক্ষাৎ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও ঠিক কি বিষয়ে তাদের কথা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে জানা যায় নি।

তবে সাক্ষাতের পর এরশাদ একটি ইফতার মাহফিলে হাজির হয়ে বলেছেন, আরও সাড়ে আট বছর জোট সরকারের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকতে চায় জাতীয় পার্টি। অবশ্য এর আগে রংপুরে একটি জনসভায় গিয়ে সামনে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।  

এরশাদের মুখের কথা শোনা যাচ্ছে দলের অন্য বড় নেতাদের মুখেও। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পক ভাল। ’

তিনি আরও বলেন,  ‘আদালতের রায়ে যে সপ্তম সংশোধনী বাতিল হবে তা আমরা আগেই জানতাম। কারণ সংবিধানে সামরিক শাসনের কোন বিধান নেই। তাই ওই সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ রায়ের কারণে সরকারের সঙ্গে আমাদের সর্ম্পকের কোনো অবনতি ঘটবে না। কারণ আদালত এ রায় দিয়েছেন। ’

মহাজোট নেতার কাছে জাতীয় পার্টির চাহিদা পূরণ করার সময় এখনো যায়নি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের কোনো দাবি এখনও প্রত্যাখান করেননি। তিনি তো বলেননি, জাতীয় পার্টির জন্য কিছুই করা হবে না। সরকারে আমাদের দলের একজন মন্ত্রীও আছেন। ’

সরকারের বয়স কেবল দেড় বছর পেরিয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে সময় মতো সব কিছু হয়ে যাবে। ’
 
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হমায়ুন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘সপ্তম সংশোধনী  অবৈধ ঘোষণা করার ফলে এরশাদ বিপদে পড়তে পারেন। সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে নিতে পারে। তবে তার আগে সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে এরশাদের আচার ব্যবহারের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। হাইকোর্ট তা বলেই দিয়েছেন। তবে এখনই কিছু বলা মুশকিল। ’

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্টের রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘এখনও পুর্ণাঙ্গ রায় আসেনি। পূর্ণাঙ্গ রায় আসার পর রায়ের আলোকে, বাস্তবতার নিরিখে ও জনমতের ভিত্তিতে তা বাস্তবায়ন হবে। তবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সংসদে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এ রায়ের ফলে এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের অবনতি হবে এমনটা আমি মনে করি না। হয়তো সামরিক শাসন অবৈধ ঘোষণা করে  দেওয়া এ রায়ের ফলে এরশাদ একটু উদ্বিগ্ন হতেই পারেন। ’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) কাজী মাহমুদ হাসান বলেন, ‘জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক হলেও কোনো লিখিত চুক্তি ছিলো না। তাই মহাজোটের শরিক দল হিসেবে যা আমরা পেয়েছি তা অনেক ভালো। এখন আর সম্পর্কের অবনতি ঘটিয়ে লাভ কি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে থাকবো কি থাকবো না তা সময় এলেই বোঝা যাবে। তবে সরকারের সঙ্গে আমাদের এখনো সম্পর্কের কোনো অবনতি ঘটেনি। ’

সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের মৌলিক উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তা এরশাদের সময়ই হয়েছে বলেও দাবি করেন জাতীয় পার্টির এই নেতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।