১০ জানুয়ারি ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকে এই আসনের সংসদ নির্বাচন নিয়ে অন্যান্য দল নিশ্চুপ থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক তোড়জোড়।
ওই দিন রাতেই মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল করেন। এরপর থেকে একের পর এক চলতে থাকে আনন্দ মিছিল, পথসভা এবং অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলনকে সংবর্ধনা দেওয়া শুরু হয়। পছন্দের নেতা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় শতাধিক স্থানে মিষ্টি বিতরণও করেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিএনপির খায়রুজ্জামান শিপন ও জাতীয় পার্টির সাজন কুমার মিস্ত্রি মনোনয়নপত্র জমা দিলেও নির্বাচনী মাঠে তাদের কার্যক্রম না থাকায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছে, নির্বাচন এলে সবার মধ্যে একটি আনন্দ উৎসব বিরাজ করে। প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে আসে। কিন্তু নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হলেও নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী বা নেতাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি। কারও মুখে নৌকার বাইরে কোনো প্রতীকের কথাও শুনিনা।
হারুন-অর-রশীদ, তানজীলুর রহমান পলাশ, নান্টুসাহাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী বলেন, অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন উচ্চশিক্ষিত একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। দীর্ঘদিন মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন। বিগত জোট সরকারের আমলে দলীয় নেতাকর্মীদের হামলা-মামলার ক্ষেত্রে সব সময় পাশে ছিলেন। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাকর্মীরা খুশি হয়েছে। আশা করি তিনি মোরেলগঞ্জ শরণখোলার জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন।
তারা বলেন, আমরা সব সময় নৌকার পক্ষে রয়েছি। অ্যাডভোকেট মিলন ভাই একজন সৎ মানুষ। তার জন্য আমরা কাজ করব। তিনি নির্বাচিত হয়ে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের পাশে থাকবেন বলে আমরা মনে করি।
উন্নয়ন কর্মী আলমগীর হোসেন মীরু বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য ইতিবাচক মানসিকতার জনপ্রতিনিধি প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সাবেক ছাত্রনেতা প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এসডিজি বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক বলেন, অ্যাডভোকেট মিলন সাহেব দলের জন্য দীর্ঘদিন কষ্ট করেছেন। শেষ বয়সে দল তার মূল্যায়ন করেছেন। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পরে আমরা তার পক্ষে পথসভা করেছি। নৌকার বিজয়ের জন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি কর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলে আশা করছি।
শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আমরা তা শতভাগ সমর্থন করি। অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন একজন যোগ্যপ্রার্থী। তার বিজয় মানে নৌকার বিজয়। নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা এক হয়ে কাজ করব।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাজন কুমার মিস্ত্রি বাংলানিউজকে বলেন, গণমানুষের কাছে পল্লিবন্ধু হোসেইন মোহাম্মাদ এরশাদের একটি জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকব। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবো। জনগণের কাছে দোয়া চাইবো। ভোটাররা চাইলে আমি নির্বাচিত হব।
বিএনপির প্রার্থী খায়রুজ্জামান শিপন বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তির আন্দোলন হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা জীবন দিয়ে হলেও নির্বাচনের মাঠে থাকব। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয় আমাদেরই হবে ইনশা-আল্লাহ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দীর্ঘদিন পরে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। কারণ বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু-অবাধ হয়নি। উপ-নির্বাচন গুলোকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করে জনগণের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।
দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, সারাজীবন মানুষের ভালোবাসা নিয়ে রাজনীতি করেছি। মানুষের ভালোবাসাই আমার সম্বল। আগামী নির্বাচনে এ আসনের জনগণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকাকে বিজয়ী করবেন বলে তিনি আশা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০
এসএইচ