ঢাকা: কাজী জাফর এ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক হিসেবে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং এ দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সংগঠনের নেতা হিসেবে আমাদের মাঝে অম্লান এবং আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল সমুজ্জ্বল থাকবেন।
শনিবার (২৯ আগস্ট) ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় প্রয়াত কাজী জাফর আহমদকে নিয়ে ‘পুরনো দিনের গল্প’ শোনাতে গিয়ে তার বন্ধু-সহকর্মীরা এসব কথা বলেন।
কাজী জাফরের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত এই আলোচনায় অংশ নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)-এর সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রবাসী শিক্ষাবিদ আতিকুর রহমান সালু ও ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
‘ইতিহাসে সমুজ্জ্বল কাজী জাফর আহমদ’ এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন কাজী জাফরের মেয়ে কাজী জয়া আহমদ।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সে আমার বিশেষ বন্ধু ছিল। সে আমার ক্লাস ফ্রেন্ড ছিল, আমরা একই ব্যাচের ছাত্র। আমি এসএম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম, কাজী জাফরও এটার ছাত্র ছিল। সে প্রায়ই আসত, রাজনৈতিক কারণেই আসতো। তখন দেখা সাক্ষাত হতো, আলাপ হতো, হলকে উপলক্ষ করেই জানাশোনা শুরু হয়। বন্ধুত্ব হলেও বন্ধুত্ব একটা বিশেষ বন্ধুত্বে পরিণত হয়। তবে আমি ছাত্র রাজনীতি করিনি, কাজেই সেই দিক থেকে তার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার কারণ ছিল না।
আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে একটা পিআইয়ের ফ্লাইট ছিল ঢাকায় আসার মাঝখানে কুমিল্লায় থামতো। একটা ফ্লাইটে আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছি কুমিল্লায় থামলো। যারা কুমিল্লার যাত্রী তারা নেমেছে। কুমিল্লা থেকে ঢাকার যাত্রী উঠালো। তার মধ্যে লক্ষ করলাম একজন দাঁড়ি-গোফ ওয়ালা চাদর গায়ে আমার দিকে তাকাতে তাকাতে ঢুকলো। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কেন তাকালো? যেই আমার পাশে আসলো-মাথা নিচু করে বললো, আমি কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ডে আছি, আপনি কিছু বলবেন না। আমি এই মাত্র চিনলাম, আগে তো বুঝিনি…। এই হচ্ছে কাজী জাফর। তখন বুঝলাম যে, আন্ডারগ্রাউন্ডটা কি জিনিস।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাফর ভাই অসাধারণ নেতা ছিলেন, তার একটা মেমোরি ছিল। একটা অসাধারণ ক্ষমতা ছিল মানুষকে আপন করে নেওয়ার এবং নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবার। আমাদের কাছে নায়ক ছিলেন, হিরো ছিলেন। সত্যি উনি একেবারে কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকতেন। তিনি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা উজ্জল নক্ষত্র, উনি সব সময় উজ্জল নক্ষত্রের মতো রাজনীতিতে বিচরণ করছেন।
তিনি বলেন, কাজী জাফর আহমেদ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন, শেষ সময়ে তিনি বলেছেন, আমি যেতে চাই, মানুষের ভালোবাসা নিয়ে। উনার একটাই লক্ষ্য ছিল- সমাজকে বদলে দেবেন, রাষ্ট্রকে বদলে দিয়ে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন।
‘আজকে তাকে আমার প্রায় মনে পড়ে। আজ-কাল তাকে মিস করি। তার অনুপস্থিতিটা আমি অনুভব করি। আজকে যখন আমরা এই একটা অবস্থার মধ্যে পড়েছি, সেই অবস্থায় কাজী জাফরের প্রয়োজন ছিল। ’
কাজী জাফরের দেখানো রাজনীতির পথে তার মেয়ে জয়া এগিয়ে আসবে-এই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, জাফর ভাইয়ের সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক এটা দীর্ঘকালের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে শ্রমিক আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তির আন্দোলন, স্বাধীনতার সংগ্রামের আন্দোলন সব ক্ষেত্রে আমরা প্রায় একত্রে পথ চলেছি। বলতে পারেন জাফর ভাই এক কথায় আমাদের নেতা ছিলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কটা এতই অবিচ্ছেদ্য ছিল যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন আমরা ভারতে আশ্রয় নিয়ে এই লড়াইয়ের ক্ষেত্র সংগঠিত করার চেষ্টা করছি সেসময়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজাফফর আহমদের সঙ্গে আমার দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। মুজাফফর আহমদ আমাকে দেখে বললেন যে, জাফর-মেনন আপনারা এসেছেন। আমি বললাম জি না, আমি মেনন, কাজী জাফর আরেক জন। উনি বলছেন যে, ওহ জাফর-মেনন দুটি নাম।
তিনি বলেন, আমরা একসাথে পথ চলেছি। ছাত্র আন্দোলন বিশেষ করে শিক্ষা আন্দোলনে জাফর ভাইয়ের যে অতুলনীয় নেতৃত্ব সেই নেতৃত্ব এটা সবাই স্মরণ রাখবে। এই শিক্ষা আন্দোলনে প্রতিটি ঘটনায় তার বক্তৃতা মানুষকে এতই মোহগ্রস্থ করতো, এমন উদ্বেলিত করতো যে রকম আর দেখি নাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
এমএইচ/এইচএডি