ঢাকা: আওয়ামী লীগ কাপুরুষের দল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বুধবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন আয়োজিত ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান আমলে যে রাজনীতি করেছেন, সেটা যদি ধরে রাখতেন, তাহলে তিনি অন্য রকম জায়গায় স্থান পেতেন। আজ শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙানো বাধ্যতামূলক। পুলিশ দিয়ে ছবি পাহারা দিতে হয়। সম্মান জোর দিয়ে আদায় করতে হয় না। জিয়াউর রহমান মানুষের অন্তরে রয়েছেন। পুলিশ দিয়ে জিয়াউর রহমানের সম্মান জোর করে আদায় করা হয় না, মানুষ জিয়াউর রহমানকে অন্তর দিয়ে সম্মান করে। ’
বর্তমানে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের পোস্টিং দিল্লির কথার বাইরে হয় না উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘এখন সরকারি কোনো কর্মকর্তার পোস্টিং দিল্লির নির্দেশনার বাইরে হয় না। ওসি প্রদীপ কোথায়, খোঁজ নেন। কারাগারে আছে কি না, সন্দেহ আছে। ’
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে জামায়াতের ১৮ জন সংসদ সদস্য তত্তাবধায়ক সরকারের জন্য একটা বিল আনলেন। কিন্তু সেই বিল পাস হলো না। শেখ হাসিনাও দ্বিমত পোষণ করলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ধানমন্ডিতে জামায়াতের গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামীসহ অনেকের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই ছবিও তো আছে। জামায়াতের চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করলো। সেটি সংসদে পাসও হলো। পরে তারা ক্ষমতায় এসে নিজেদের আজীবন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সেটা বাতিল করে দিল। জামায়াত তো গণতান্ত্রিক একটা দল। নিষিদ্ধ করে দেখান। এটা আওয়ামী লীগের পলিটিক্স।
তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় মেজর খালেদ মোশাররফ ও কর্নেল তাহেরকে আড়াল করার সুযোগ নেই। শেখ মুজিবুর রহমানের দাফনের পরে কর্নেল তাহের একটা উক্তি করেছিল, শেখ মুজিবের লাশ কেন ফেলে দেওয়া হলো না। কর্নেল তাহের একটা উন্মাদ প্রকৃতির লোক ছিল।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, রক্ষীবাহিনী বাংলাদেশি ছিল না। এরা ছিল ভিনদেশি। তাদের চিৎকারেই বুঝা যেতো এরা কোন অঞ্চলের লোক। আমি নিজে রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে লড়েছি। আজ সীমান্তে লাশ রিসিভ করা হয়। সীমান্ত বাহিনী বিজিবি গুলি ছোড়ে না। যদি প্রতিবাদ করতে না পারে, তাহলে হারিকেন নিয়ে সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকুক, অস্ত্র নিয়ে দাঁড়ানোর কী দরকার।
তিনি বলেন, বলা হয় চার নেতা হত্যার জন্য জিয়াউর রহমান দায়ী। বলা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে দেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু জিয়াউর রহমান তো ৩ নভেম্বর থেকেই বন্দি করেন খালেদ মোশাররফ। কন্যা হিসেবে পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতেই পারেন। কিন্তু আমি তো দেখছি, শেখ মুজিবের খুনিদের প্রত্যক্ষ ভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সুবিধা দিচ্ছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান যুব সমাজ চেতনা ধারণা করে না। তারা যদি চেতনা ধারণ করে, তাহলে এদেশটা পাল্টে যেতো। দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে যুব সমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এ দেশে রক্ষীবাহিনীকে প্রথম দায়মুক্তি দেওয়া হয় শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে। তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হলো। ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। সব চোরদের নিয়ে বাকশাল গঠন করা হলো। তখনই সব অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তিনি বলেন, এখন দেশে কারো নিরাপত্তা নেই। পুলিশ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে। আবার হাসপাতালে পাবলিক পুলিশ মেরে ফেললো। বিজিবিকে মেরে ফেললো মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। র্যাবকে ভারতের বিএসএফ মাদক পাচারের অভিযোগে বেঁধে রাখলো।
বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আহসান হাবিব লিংকন, তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২০
টিএম/আরআইএস/