ঢাকা: বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছে গ্রুপিং। মূলত সংগঠনটির সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সংগঠনের মধ্যে অন্তর্কোন্দল চলছে।
বর্তমান করোনা মহামারি ও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলের যে দুর্দিন চলছে এর মধ্যেও তাদের দুজনের দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি। এরই প্রতিফলন দেখা গেছে গত শুক্রবার (২১ মে)।
এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরীসহ সব রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের মুক্তির দাবিতে মহিলা দল আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন আফরোজা আব্বাস। ব্যানারে লেখা ছিল সভা পরিচালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। কিন্তু তিনি সভায় না আসায় সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেত্রী হেলেন জেরিন খান সভা পরিচালনা করেন।
জানতে চাইলে সুলতানা আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি দলের সাধারণ সম্পাদক। আমার সঙ্গে আলোচনা না করে প্রোগ্রাম দেওয়া হয়েছে। দুই-চার ঘণ্টা আগে যদি আমাকে জানায় তাহলে আমি কি সেখানে অতিথি হিসেবে যাব?
সভাপতির ওপরে দায় চাপিয়ে সুলতানা আহমেদ বলেন, তিনি (আফরোজা আব্বাস) সবসময় এরকম করেন। আমার সঙ্গে আলোচনা না করে কর্মসূচি দেন।
অপরদিকে সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান বাংলানিউজকে বলেন, কর্মসূচির আগের দিন রাত ১০টার দিকে সভাপতি আফরোজা আব্বাস আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, সুলতানা আহমেদের বাসায় দুজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সেজন্য তিনি অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না। আপনি অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
হেলেন জেরিন খান জানান, সভাপতি আফরোজা আব্বাস তাকে জানিয়েছেন সুলতানা আহমেদ অনুষ্ঠানে আসতে পারবেন না। বিষয়টি তিনি রাতেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা দলের এক নেত্রী বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতেই আমাদের দুর্দিন যাচ্ছে। তার মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বে দলটি শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। দুজনের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরেই চলছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর মহিলা দলের কমিটি হয়েছিল। সে হিসেবে বহু আগেই এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা সবাই চাই নতুন কমিটি হোক। ছাত্রদলের বহু নেতা আছে যারা মহিলা দলের নেতৃত্বে আসার যোগ্য। তাদের মূল্যায়ন করা উচিত।
জানা গেছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বের কারণে মহিলা দলের এখন তেমন কর্মসূচি নেই বললেই চলে। তার মধ্যে দুই-একটি হলেও দুই গ্রুপের কারণে তা সফল হয় না।
শুক্রবারের কর্মসূচিতে সুলতানা আহমেদ নিজে তো আসেননি, তার অনুসারীদেরও আসতে নিষেধ করেছেন বলেও এক নেত্রী জানান।
অপরদিকে সুলতানা আহমেদ বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে নেত্রীরা যেতে চান না। আগে থেকে সবাইকে না জানালে সবাই কীভাবে যাবে?
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির এমন এক সদস্য বলেন, সাধারণ সম্পাদকের বাসায় করোনা রোগী থাকায় তিনি আসেননি। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৫ মাসে তারা ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩০টির কাউন্সিল সম্পন্ন করেন। যার মধ্যে ২৬টি জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আর কাউন্সিল করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সংগঠনটির ২৬৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কিছুদিন পরই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে গ্রুপিং দেখা দেয়।
গত বছর ১৬ নভেম্বর তারেক রহমানের জন্মদিন পালন উপলক্ষে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সভাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপে মারামারি হয়। সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় ওই সভা শুরু হওয়ার ১ ঘণ্টা পর সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ উপস্থিত হয়ে মাইক ছিনিয়ে নেন। তিনি আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণও করেন। পরে আফরোজা আব্বাসের গ্রুপের মেয়েরা সুলতানা আহমেদকেও হেনস্তা করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন।
এ সময় দুই গ্রুপের কয়েকজন আহতও হন। পরদিন আফরোজা আব্বাস আর হেলেনের পক্ষের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী সুলতানার বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে অনাস্থাপত্র দেন এবং তার বহিষ্কার দাবি করেন। এরপর থেকে শীর্ষ দুই নেত্রী একসঙ্গে কোনো কর্মসূচি পালন করেননি। যার সবশেষ বহিঃপ্রকাশ শুক্রবারের কর্মসূচি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২১
এমএইচ/এমজেএফ