ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

অস্থিরতা বাড়ছে সরকার ও আ. লীগে

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১০
অস্থিরতা বাড়ছে সরকার ও আ. লীগে

ঢাকা: অস্থিরতা বাড়ছে সরকারে। বেপরোয়া আমলা, নিয়ন্ত্রণহীন প্রশাসন, সাংসদের প্রভাব বিস্তার, শরিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খলতা আর সর্বোপরি বিরোধীদলের সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার হুমকিসহ নানা ইস্যুতে হিমশিম খাচ্ছে মহাজোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ।



ক্ষমতা গ্রহণের পর শুরুর দিকে সরকার বেশ দক্ষতার সাথে দেশ, দল ও জোট সামলে আসলেও সম্প্রতি উপরুল্লিখিত বিষয়গুলোতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষে সব সামলে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে।
 
এসবের পাশাপাশি বাড়তি উপসর্গ হিসেবে যোগ হচ্ছে জ্বালানি সঙ্কট, পানি বিদ্যুৎ সঙ্কট, শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা।

আর যুদ্ধাপরাধের বিচার, সংবিধান সংশোধন, ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিসহ সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগ একদিকে যেমন প্রশসিংত হচ্ছে তেমন অন্যদিকে তার বিরোধীতাও রয়েছে। এসব  নিয়েও স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ।
 
বিডিআর বিদ্রোহের সুষ্ঠু সমাধান, সংসদীয় গণতন্ত্র সুদৃঢ় করতে নবম অধিবেশনেই সব সংসদীয় কমিটি গঠন সম্পন্ন ও সংরতি আসনের নারী সাংসদ নির্বাচনকে ক্ষমতাসীনদের সফলতা হিসেবেই ধরা যায়। তবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সঙ্কট আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের লাগাতার তা-বে অর্জিত সাফল্য ম্লান হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এমনকি মন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও আমলাদের মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতার বিষয়টিও সরকারের বড় ধরনের সমস্যা বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে সরকারের সাফল্য বিষয়ক প্রচার প্রচারণায়ও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এরই মধ্যে মহাজোট সরকারের দেড় বছরের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আমলাদের অগাধ ক্ষমতার পেছনে সরকারের একজন ক্ষমতাবান উপদেষ্টার প্রভাব রয়েছে। ওই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও দলের শীর্ষ কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

এদিকে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ১৮ মাসের মাথায় বিরোধী দলের হরতাল (২৭ জুন) সরকারের জন্য সতর্ক সঙ্কেত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দেওয়ার প্রতিবাদে বিরোধী দল লংমার্চ কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে। বৃহস্পতিবার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আন্দোলনের নতুন তরিকার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন চায়ের দোকান থেকে শুরু হবে এ আন্দোলন। ওই রাতেই বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারকে হুঁসিয়ার করে দিয়ে বলেছেন এ সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে ক্ষমা চেয়েও আর পার পাওয়া যাবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিরোধী দলের কঠোর কোনো কর্মসূচিতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

সম্প্রতি সরকার দলীয় সাংসদ নুরুন্নবী শাওনের পিস্তলের গুলিতে যুবলীগ নেতার মৃত্যুতেও ক্ষমতাসীনদের নিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে সারাদেশে।

জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার, সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ বাদ প্রসঙ্গ ও দেশে আবার বাকশাল কায়েমের অপপ্রচারও সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছে বলে বিশিষ্ট জনদের ধারণা।

মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভূক্তি ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়ে মন্ত্রী এমপিদের সুপারিশ মানা- না মানা নিয়ে সরকারের মধ্যেই বিরোধ এক্ষেত্রে কম ভূমিকা রাখছে না।

একটি দায়িত্বশীল  সূত্রে  জানা গেছে, মতায় বসার পর থেকেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সংসদীয় কমিটির সভাপতির মধ্যে চলছে সমন্বয়হীনতা। কোনো কোনো মন্ত্রী এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও অন্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কে কথা বলছেন। সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানরাও বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীদের বিপরীত বক্তব্য দিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনো কোনো মন্ত্রীর উক্তিকে অপরমন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতারা প্রকাশেই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করছেন। কোনো কোনো বিষয়ে  খোদ প্রধানমন্ত্রীও ুব্ধ বলে জানা গেছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর এক সদস্য ‘জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে’ বলে বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ওই নেতাকে ডেকে নিয়ে ুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সংবিধান সংশোধন নিয়ে বাইরে কথা বলতে বারণ করে দিয়েছেন নেতা- এমপি-মন্ত্রীদের।  

এদিকে, মন্ত্রিসভায় অনভিজ্ঞ কিছু মুখ থাকায় আমলারা এই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন। মন্ত্রীদের দেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এসব আমলারা নানা ছলছুতোয় বাস্তবায়নে গড়িমসি করছেন। সূত্র জানায়, মন্ত্রী নির্দেশনা দিলেও সচিব তার অধিনস্তকে ‘আলাপ করুন’ বলে ফাইলে স্বার করছেন না। যা পরবর্তীতে আর আলোর মুখ দেখছে না। এছাড়াও কোনো  কোনো সচিব নিজে দায়িত্ব না নিয়ে খোদ মন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপোর অজুহাতে কালপেণ করছেন। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা সুচতুর আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এদিকে বর্তমান সরকারের স্বল্প মেয়াদকালে মন্ত্রণালয়ে রুলস অব বিজনেস না মানার অভিযোগ ওঠে। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী পরিষদের সচিবকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সচিবকে সচিবদের নিয়ে বৈঠক করতে হয়েছে। বৈঠকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সচিবদের কড়া তাগিদ দেওয়া হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করার পর আঠারো মাস পার হলেও এখনও বিএনপি-জামায়াত মুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে পারেনি। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ফলে মন্ত্রীদের বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সব কিছু থেমে যাচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে সিনিয়রদের সভাপতি করায় মন্ত্রীদের মধ্যে চলছে সমন্বয়হীনতা। সংসদীয় কমিটি আগ বাড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিচ্ছে। নতুন মন্ত্রীদের কিছুটা বিব্রত করতে এসব সিদ্ধান্ত আগ বাড়িয়ে মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই বিষয় ভিত্তিক সংসদীয় সাব কমিটি গঠনকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিমন্ত্রী। তবে তিনি নিজেও এ সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।