ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাক্ষাৎকার 

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ: নাজিম উদ্দিন আলম

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২১
করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ: নাজিম উদ্দিন আলম

ঢাকা: নাজিম উদ্দিন আলম, নব্বইয়ের দশকের তুখোড় ছাত্র নেতা। এমপি ছিলেন তিন বার।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এই নেতা ডাকসুর এজিএস ছিলেন। ভোলা-৪ আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, তখন দলের প্রভাবশালীদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।  

সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে ডিওএইচএসের বাসায় দেশের বর্তমান রাজনীতি ও বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মহসিন হোসেন। পাঠকদের উদ্দেশে পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।  

বাংলানিউজ: দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

আলম: বর্তমানে সারাবিশ্বের মতো দেশের মানুষও কোভিড-১৯ নিয়ে উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে ছড়াচ্ছে সেটা চিন্তার কারণ। সরকার প্রথম থেকে আন্তরিক হলে এতটা খারাপ পরিস্থিতি হতো না। এই সরকার যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত না, সেজন্য তারা জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নয়। এতদিনে ৭০/৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত ছিল। শুধু সরকারের অবহেলা, ব্যর্থতা আর লুটপাটের কারণে এবং একটি স্বার্থাম্বেষী মহলকে সুবিধা দেওয়ার জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে যে তিন কোটি টিকা আনার চুক্তি করেছিল। সেখানে মাত্র ৭০ লাখ টিকা পেয়েছে। অথচ জনগণের টাকা তাদের দিয়েছে। সেই টাকা ফেরত পাবে কি না সন্দেহ। এখন অনেকে এক ডোজ দিয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারেনি। ভ্যাকসিন নিয়ে যে তালবাহানা হলো এতে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তারা প্রতিরোধ করছে। আমাদের জনগণকে আমরা কেন ভ্যাকসিন দিতে পারলাম না। জনগণের কাছে আওয়ামী লীগকে এর জবাব দিতে হবে। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা। এখন তারা চায়নার কাছ থেকে ভ্যাকসিন আনছে, কিন্তু আগেতো চায়না দিতে চেয়েছিল তখন কেন আনেনি। আমরা চাই তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন এনে জনগণকে রক্ষা করা হোক।

বাংলানিউজ: আপনি বললেন করোনা প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থ। এ ক্ষেত্রে বিএনপি কী সফল বলে আপনি মনে করেন?

আলম: আমাদের অবস্থান থেকে আমরা প্রতিবাদ করছি। আমাদের দলের মুখপাত্র সব সময়ই বলছেন। এখনতো ওপেন রাজনীতির সুযোগ নেই। সেহেতু অনলাইনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেখানে আমরা প্রতিবাদ করছি। পরিবেশ যখন ভাল হবে তখন আবার প্রতিবাদ করবো। সরকারেরতো চরম ব্যর্থতা রয়েছে। তারা বলেছিল, জেলায় জেলায় ভ্যান্টিলেশন- আইসিইউর ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সব জেলায় করতে পারেনি। ঢাকার ওপর চাপ পড়ছে। রোগীরা আইসিইউয়ের অভাবে রাস্তাঘাটে মারা যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা সিএমএইচ-এ চিকিৎসা নিচ্ছে। আমরাতো আর সিএমএইচে চিকিৎসা পাবো না। ঢাকা মেডিকেল, পিজি হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে কেন উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। তারা ১২/১৩ বছর ক্ষমতায়, কি করেছে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার যে দুর্নীতির খবর শোনা যায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লুটপাটের এত কাহিনী, পত্রিকা-সামাজিক মাধ্যমে তার এত দুর্নীতির কথা বের হচ্ছে, বিভিন্ন রকমের ভাউচার, মশারী, বালিশ কেনা থেকে শুরু করে দুর্নীতির কথা আসছে, সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বহাল তবিয়তে আছেন।

বাংলানিউজ: আওয়ামী লীগ নেতারা সব সময় অভিযোগ করেন যে বিএনপিতো মাঠে নেই। তারা সরকারের বিরুদ্ধে এত কথা বলে কেন?

আলম: বিএনপি মাঠে থাকবে কীভাবে? সরকার পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করছে, গুম-খুন করছে। বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে। এটা অতীতে ছিল না। সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মানবতা বলতে কিছু নেই। বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করাই তাদের রাজনীতি। এটাতো ঠিক না। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো সহনশীলতা, তারাতো বিরোধীদলকে সহ্যই করতে পারে না। বিএনপি কি সাতটা সিট পাওয়ার দল? আজকে তারা এরশাদের দলকে গৃহপালিত বিরোধী দল বানিয়ে রেখেছে। তারা কি দায়িত্ব পালন করছে?

বাংলানিউজ: ঢাকা মহানগর বিএনপির দুটি কমিটি হয়েছে। বিগত দিনে মহানগর কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আপনার দৃষ্টিতে নতুন কমিটি কেমন হলো, পুরনো ব্যর্থতা কি কাটিয়ে উঠতে পারবে?

আলম: আমি খুবই আশাবাদী। নতুন নেতৃত্ব এসেছে। আমাদের প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া এক হিসেবে বলা যায় গৃহবন্দী। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এই কমিটি দিয়েছেন। আমি সাধুবাদ জানাই। যে কমিটি দেওয়া হয়েছে আশা করি তাদের নেতৃত্বে আন্দোলন গতিশীল হবে। ১৯৯০ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলাম। এবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে লড়াই করে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো।

বাংলানিউজ: বিএনপির সহযোগী সংগঠন কৃষক দলের কাউন্সিল হয়েছে অনেকদিন হলো। শোনা যাচ্ছে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।

আলম: হ্যাঁ, এটা ঠিক যে কৃষক দলের কাউন্সিল অনেক দিন আগে হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেরি হচ্ছে। আমি যতদূর জানি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করবেন। আমাকে দায়িত্ব দেবে কি না জানি না। আমিতো আসলে বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে দলের সাথে সম্পৃক্ত। দলের যে কোনো দায়িত্ব নিতে সব সময় প্রস্তুত থাকি। ভবিষ্যতে যে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হলে জীবনের বিনিময়ে হলেও দায়িত্ব পালন করবো।

বাংলানিউজ: ৯০- এর ছাত্র নেতৃত্ব কে কোথায় আছেন?

আলম: ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান সম্প্রতি ঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হয়েছেন। তৎকালীন জিএস খায়রুল কবির খোকন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব পদে আছেন। আমি এজিএস ছিলাম, এছাড়া ৯৩ থেকে ৯৬ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, ৯০ সালে ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ছিলাম, বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে আছি। ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি ফজলুল হক মিলন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন।

বাংলানিউজ: আপনার পারিবারিক জীবন নিয়ে কিছু বলবেন?

আলম: আমার স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে ও-লেভেল এ-লেভেল শেষ করে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রাজুয়েশন করেছে। বর্তমানে সেখানে মাস্টার্স করছে।

বাংলানিউজ: আপনার নির্বাচনী এলাকা ভোলা-৪ এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলেন।

আলম: আমার এলাকা মনপুরা-চরফ্যাশনে এখন রাজনীতি করা খুবই কঠিন। জাতীয় রাজনীতির মতোই সেখানেও স্বৈরাচারী আচরণ হয়। সহনশীলতা নেই। বিরোধীদল ও মতকে সরকারি দলের লোকেরা সহ্য করতে পারে না। নেতাকর্মীদের ওপর নিয়মিতভাবে হামলা-মামলা হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। খুবই ভয়ভীতির মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীরা মানবেতরভাবে জীবনযাপন করছে। কয়েকদিন আগে আমাদের পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ নুর আলম সাহেব ইন্তেকাল করেছেন। তার মরদেহ নিয়ে আমি এলাকায় গিয়েছিলাম। দাফন করে ঢাকায় এসেছি। আমি প্রায়ই নিজ এলাকায় যাই।  

বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মাধ্যমে বাংলানিউজের পাঠকদের প্রতি আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২১
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।