ঢাকা: কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে অগ্রাধিকারে থাকবে বিভিন্ন পর্যায়ের যে সব ইউনিটের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সেগুলোর সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত দেড় বছর ধরে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দল সাগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে মহানগর, জেলা, উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যে সব কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সেগুলোর সম্মেলনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া নেওয়া হলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে য়েসব জায়াগায় দল চলছে, সেসব জায়গায় সাংগঠনিক স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যাও তৈরি হয়েছে। এই সব জায়গায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, দ্বন্দ্ব থাকায় দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। এর মধ্যে মাত্র ৩১টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৪৭টি সাংগঠনিক জেলাই দীর্ঘ দিন ধরে চলছে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। উপজেলা সম্মেলনও প্রায় অর্ধেক বাকি রয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলনের বিষয়ও রয়েছে।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ এই ইউনিটগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করতে চায় আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি রয়েছে দলের সদস্য পদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ করা। এ কার্যক্রমও শুরু করা হবে। এই সব লক্ষ্যকে সামনে রেখে চলতি মাস থেকেই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমগুলো সারা দেশে সফর কর্মসূটি শুরু করবে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পদকদের সমন্বয়ে ৮টি সাংগঠনিক টিম রয়েছে। গত বছর মার্চে এই টিমগুলোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে টিমগুলো মাঠে নামতে পারেনি।
এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কমতে থাকায় স্থগিত রাখা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনও শুরু হতে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমুল পর্যায়ে সম্মেলনের আয়োজন করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কয়েক ধাপে। সেভাবে নির্বাচনের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলন করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ওই নেতারা জানান।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ দিন পর এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহি সংসদের মাত্র একটি সভা হয়েছে গত বছর ৩ অক্টোবর। এর পর প্রায় এক বছর আর কেন্দ্রীয় কমিটির সভা হয়নি। এই সভায় সেসব জায়াগায় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে সে সব জায়াগায় সম্মেলন সম্পন্ন করা, আভ্যন্তরীণ সমস্যা ও দ্বন্দ্ব নিরসন করে নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, সংগঠনকে গতিশীল করার বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দিন পর কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সভায় সাংগঠনিক বিষয়গুলো সব চেয়ে বেশী গুরুত্ব পাবে। যে সব জায়গায় সম্মেলন করা দরকার সে সব জাগায় দ্রুত সম্মেলন করতে হবে। দলের ভেতরে যে সব জায়গায় দ্বন্দ্ব, অনিয়ম আছে বা যদি থাকে তার সমাধান করে নিয়ম শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে। এই বিষয়গুলোই এখন জরুরি কাজ। এ বিষয়ে সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ দিন কোভিড-১৯ পরিস্থিতি চলতে থাকায় সাংগঠনিকভাবে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি যেহেতু কমেছে এবং ধীরে ধীরে কমে আসছে তাই আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম হাতে নেবো। যদিও কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এ মাস থেকেই সাংগঠনিক টিমগুলো মাঠে নামবে। জেলাসহ কমিটির মেয়দা উত্তীর্ণ হওয়া জায়গাগুলোতে দ্রুত সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া সদস্য পদ নবায়ন, নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম করা হবে। সাংগঠন যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা যাতে কাটিয়ে দ্রুত উঠা যায় এ জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে। তাছাড়া এই সময়ে কিছু জটিলতা, সংকট তৈরি হয়েছে সে সব জটিলতা কাটিয়ে উঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হবে এবং দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেবেন। সেভাবেই কর্মসূচি নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২১
এসকে