ঢাকা: মহিলা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনারা যদি শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে মহিলা দলকে শক্তিশালী না করেন, তাহলে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুঃখ হয় যখন দেখি আপনারা নিজেদের মধ্যে কোন্দল করছেন, আমি এখানে আসার আগেও সে ধরনের ঘটনা হয়েছে।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মহিলা দলের নেত্রীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা এ ধরনের বিশৃঙ্খলা টলারেট করবো না। এ ধরনের যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এগুলো বন্ধ করেন, তা না হলে মহিলা দলের যে লক্ষ্য সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কারণে ৫০ বছরেও আমরা দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা করতে পারিনি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংসদে পাস করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এসে দেখলো তারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে তারা আর কোনো দিন ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যেখানে সব রাজনৈতিক দল এমনকি আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল চায়নি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটাকে বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে বহাল করলেন। তখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করার ফলে দেশকে চিরস্থায়ীভাবে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলা হলো। এখন পর্যন্ত আমরা কিন্তু সেই স্থিতিশীল অবস্থায় যেতে পারছি না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল (শুক্রবার) তাদের নির্বাহী কমিটির সভায় সবাইকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। কোন নির্বাচন? যে নির্বাচন শুধুমাত্র আপনাকে নির্বাচিত করবে সেই নির্বাচন? যে নির্বাচনে আমাদের ভোটাররা ভোট দিতে যেতে পারবে না, বাড়ি ঘর আক্রমণ করা হবে, ভোটকেন্দ্রে গেলে নির্যাতন করা হবে, সেই নির্বাচন? যে নির্বাচনে আপনারা আগের রাতেই দখল করে নিয়ে যাবেন সেই নির্বাচন? যে নির্বাচন আপনার ক্ষমতায় যাওয়ার আর একটি পথ সুগম করবে সেই নির্বাচন? আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হবে না।
সরকার সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব দলীয় করণ হয়ে গেছে। এমনকি সেনাবাহিনীকেও আপনারা দলীয়করণ করার চেষ্টা করছেন। এইভাবে একতরফা, একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার এদেশের জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন অবশ্যই হবে, সেটা হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায়। সবার আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, একইসঙ্গে জাতীয় নেতারাসহ যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্ত করতে হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দড়ি ধরে মারো টান, শেখ হাসিনার গদি হবে খান খান। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে ফেরেশতা এনেও যদি নির্বাচন কমিশন করা হয়, তারপরও কোনো লাভ হবে না। সুতরাং শয়তানে যেখানে আছর করে সেখানে ফেরেশতারা অসহায় হয়ে যায়। সেকারণে শয়তানের আছর থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে, এক দফা, এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি। এই স্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে যাই।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মহিলা দলের সহসভাপতি সাবেক এমপি ইয়াসমিন আরা হক, নেওয়াজ হালিমা আলি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, যুগ্ম-সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, মহিলা দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শামসুন্নাহার বেগম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া চৌধুরী বেবী, উত্তরের সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা তামান্না প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১
এমএইচ/এএটি