ঢাকা: সরকার ৪০১ (১) ধারা অনুযায়ী যে কোনো সময় শর্তহীনভাবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অথবা ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪০১-এর ৬ উপধারা মোতাবেক বিশেষ আদেশ দ্বারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে দাবি করা হয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দেওয়া স্মারকলিপিতে।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল আইনমন্ত্রীর কাছে বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেন।
এতে বলা হয়েছে, আপনি সবিশেষ অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের সাবেক তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী, দেশের বৃহত্তম জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। কারাগারে অন্তরীণ খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার মুক্তির বিষয়ে দাখিল করা আবেদন ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের আইনগত মতামতের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রজ্ঞাপন মোতাবেক সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে দু'টি শর্তে (ক। তিনি ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে তার চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং খউক্ত সময়ে তিনি দেশের বাইরে যেতে করতে পারবেন না।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির আদেশ দিলেও পরবর্তীতে বিগত ১৫/০৯/২০২০, ১৫/০৩/২০২১ ও ১৯/০৯/২০২১ ইং তারিখে প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন প্রজ্ঞাপনে একই শর্তে ৬ মাস করে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশ অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা মোতাবেক বাসায় অন্তরীণ– অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পন কিছুদিন আগে তিনি বাসায় ফিরে আসেন। কিন্তু ফের অসুস্থ হলে গত ১২/১১/২০২১ তারিখে এ হাসপাতালে পুনরায় স্থানান্তর করা হয়। আমাদের সর্বশেষ তথ্য মতে, তিনি বর্তমানে এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউ ইউনিটে ভর্তি আছেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে আমরা জানতে পেরেছি। ইতোমধ্যে চিকিৎসায় দায়িত্বরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসরা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য অভিমত দিয়েছেন বলেও এতে দাবি করা হয়।
আমরা আইনজীবীরা দেশের সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীর এই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, দেশের আইনের শাসন, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে বেগম খালেদা জিয়ার যুগান্তকারী ভূমিকা বাংলাদেশের আইন অঙ্গনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এই আইনাঙ্গনের মানুষ হিসেবে আমরা মনে করি, তার জীবনরক্ষার্থে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে আমরা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাসহ অন্যান্য বিষয়বস্তু পর্যালোচনা করে দেখেছি। সরকার ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪০১-এর ১ উপধারা মোতাবেক বেগম খালেদা জিয়াকে দু'টি শর্তে মুক্তি দিয়েছেন এবং বাসায় থাকা অবস্থায় তিন দফায় তার মুক্তির আদেশ বর্ধিত করা হয়েছে। তিনি অদ্যাবধি কোন শর্ত ভঙ্গ করেননি।
এতে বলা আরো বলা হয়েছে, ৪০১ (১) ধারামতে সরকার যেকোন সময় শর্তহীনভাবে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অথবা ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৪০১-এর ৬ উপধারা মোতাবেক বিশেষ আদেশ দ্বারা বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। ' এ ক্ষেত্রে আইনগত কোন বাধা নেই বরং সরকারের এই সিদ্ধান্ত আইনানুগ হবে বলে স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়।
অতএব, উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহোদয়ের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার্থে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে সদাশয় সরকার মহানুভবতার পরিচয় দিবেন।
প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন,- অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, নীতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, তৈমুর আরম খন্দকার, ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস (কাজল), অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী।
বাংলাদেশ সময় : ১৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩,২০২১
জিসিজি/এমএমজেড