ঢাকা: খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি এই অবিচার জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ প্রস্তুত হচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় আপনার দুর্বৃত্তদের ব্যারিকেড করে আপনার ময়ূরের সিংহাসন রাস্তায় লুটিয়ে দেওয়ার জন্য।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
আজকের মতো বসে আর বিক্ষোভ সমাবেশ হবে না জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা জানি আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ করলে আমাদের বন্দি করা হবে, লাঠিপেটা করা হবে। কিন্তু সব বেষ্টনী, সব লৌহ শৃঙ্খল মহিলা দল ভেঙে তছনছ করে দেবে।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনি মনে করেছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে আপনি নিরাপদ। আপনার সামনে আর কোনো কাঁটা থাকলো না। কিন্তু আপনি যে অন্যায় অবিচার করেছেন, যে দুর্নীতি লুটপাটের মহাস্বর্গ রচনা করেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম করেছেন, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ছাত্র-যুবকদেরকে মনে করবেন না যে আপনি নিরাপদে আছেন। আপনার চারিদিকে অনেক কাঁটা তৈরি হচ্ছে, আপনি তা টের পাচ্ছেন না।
রিজভী বলেন, এখনও সময় আছে, সুযোগ আছে, দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত অবনতিশীল। গতকালও চিকিৎসকরা বলেছেন জীবনমৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিণী, বার বার গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। জনগণের সঙ্গে যিনি কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তার প্রতি এই অবিচার জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ প্রস্তুত হচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় আপনার দুর্বৃত্তদের ব্যারিকেড করে আপনার ময়ূরের সিংহাসন রাস্তায় লুটিয়ে দেওয়ার জন্য।
হিটলারের বাহিনীর অস্ত্র ছিল না প্রশ্ন করে রিজভী আরও বলেন, হিটলারের ছিল, মুসোলিনির ছিল, সাদ্দামের ছিল, এরশাদের ছিল, তারপরও গণতন্ত্র বিজয় লাভ করেছে। সুতরাং যারা সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, কল্যাণের পক্ষে তারা বিজয়ী হবেই। হয়তো অনেক রক্ত ঝড়বে। কিন্তু আমরাই জিতবো, তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল আজকে সবাই আজকে ঐক্যবদ্ধ।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুধবার অনেক কথা বলেছেন, উনি অনকম্পা দেখাচ্ছেন, আর কত দেখাবেন। একথাও তিনি বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় তখন এরশাদ এবং উনার ফুফা জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানসহ অনেককে নাকি চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য মিথ্যা।
কিনি বলেন, আপনার (প্রধানমন্ত্রী) মতো নির্দয় এবং নিষ্ঠুর আচরণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কখনও করেননি। আপনি খালেদা জিয়াকে বন্দি করেছেন কি প্রক্রিয়ায়। আপনার মন্ত্রীরা বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায়। বাংলাদেশে কি আইনি প্রক্রিয়া আছে? সন্ত্রাসী, যুবলীগ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী, লক্ষ্মীপুরে অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের নামে অভিযোগ আছে। তাদের জেল খানায় ধুমধাম করে বিয়ে হয়। তারা মুক্ত হয়ে যায়। নাটোরের বিএনপি নেতা নূর হোসেন বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে যারা হত্যা করেছে, রাষ্ট্রপতি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। যুবদলের নেতা গামাকে যারা হত্যা করেছে তাদের ক্ষমা করে দেন। এইতো হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়া। জনগণ বলে এটা আইনি প্রক্রিয়া নয়। এটা হাসিনা প্রক্রিয়া। এই হাসিনা প্রক্রিয়ায় যদি কোনো জজ নিরপেক্ষ রায় দেয় তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারেক রহমানের পক্ষে যে বিচারক রায় দিয়েছেন তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। আর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যিনি রায় দিয়েছেন সেই বিচারককে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। এই হলো হাসিনা প্রক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনি মনে করেছেন অনেক নিরাপদে আছেন। চারিদিকে বেষ্টনী নিরাপত্তা এসএসএফ। বিএনপি আর কি করবে? আমিতো নিরাপত্তার মধ্যে আছি। নমরূদও নিরাপত্তার মধ্যে ছিল। চারিদিকে যা দেখা গেছে সব তার সেনাবাহিনী। কিন্তু কোথা থেকে একটা মশা তার নাকে ঢুকে গেলো তিনি টিকতে পারলেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, আপনি চারিদিকে যত নিরাপত্তা দেখছেন এই নিরাপত্তা, নিরাপত্তা নয়। বেহুলার বাশের ঘরের মতো কোথায় যে ছিদ্র আছে, সেই ছিদ্র দিয়েই কিন্তু আপনার পরোয়ানা নিয়ে হাজির হতে পারে।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, মহিলা দলের নেত্রী জেবা আমিন খান, নিয়াজ হালিমা আর্লি, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আকতার, হেলেন জেরিন খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এমএইচ/এনএইচআর