লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে একযোগে ১৯ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। বুধবার (১৫ নভেম্বর) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক কার্যকরী কমিটির সভায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এ সময় দলের সহযোগী সংগঠনের আরও সাতজন নেতাকে বহিষ্কারের জন্য স্ব স্ব সংগঠনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলের মতামতের বাইরে গিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় এসব নেতাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিন সন্ধ্যার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী ফটিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বহিষ্কারের নির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগের মনোননীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের জেলা আওয়ামী লীগ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিষয়ে স্ব স্ব সংগঠনকে জানানো হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তারা যদি নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন না দেন, তবে তাদের নামেও যেন বহিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতারা হলেন- জেলা সদর থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল হাসান রনি, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল হালিম মাস্টার, ফজলুর রহমান ঢালী ও মোক্তার হোসেন বিপ্লব। এরা তিন জনই ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সদর থানাধীন উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হুমায়ূন কবির বাবুল মোল্লাকে বহিষ্কার করা হয়।
সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন- উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ছৈয়দ, সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সভাপতি ফিরোজ মোহাম্মদ বাকী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শামছুল আলম বাবুল, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চরশাহী ইউপি চেয়ারম্যান গোলজার মোহাম্মদ, দিঘলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন, নবীউর রহমান মুকুল, প্রাথমিক সদস্য আলতাফ হোসেন, চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মান্দারী ইউনিয়নের সোহরাব হোসেন রুবেল পাটওয়ারী, কুশাখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সদস্য তিতু মিয়া টিটু। এরা সবাই স্ব স্ব ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপরীতে বিদ্রোহী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
বহিষ্কারের নির্দেশনা দেওয়া সহযোগী সংগঠনের নেতারা হলেন- জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উত্তর হামছাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুন ভূঁইয়া, দত্তপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, কুশাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম, সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল করিম, একই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জু চৌধুরী এবং সদর থানা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও টুমচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছে। কোনো কোনো ইউনিয়নে নৌকার বিপরীতে পাঁচ জনের বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিজয়ে বড় বাধা হয়ে আছেন এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এক্ষেত্রে যোগ্য লোককে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন না দেওয়াকে দায়ী করছেন দলের সাধারণ নেতা-কর্মী ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ- জেলা ও উপজেলা নেতারা কোনো কোনো ইউনিয়নের প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কেন্দ্রে নাম পাঠিয়েছেন। মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চন্দ্রগঞ্জ, হাজিরপাড়া, চরশাহী, উত্তর জয়পুর, মান্দারী, দত্তপাড়া, কুশাখালী, ভবানীগঞ্জ ও শাকচর ইউনিয়নে উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১
এসআরএস