ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

সংকট কাটাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ চান ১৪ দল নেতারা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২২
সংকট কাটাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ চান ১৪ দল নেতারা

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী চলমান সংকটের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দোশে প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হলে সেটাও নিতে হবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের নেতারা । এজন্য তারা পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থার নেওয়ার কথা বলছেন।

করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বে জ্বালানি, খাদ্য পণ্যসহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার আগে থেকেই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপগুলোকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ১৪ দলের নেতারা। সেই সঙ্গে তারা আরো কিছু জরুরি পদক্ষেপের কথা বলছেন যা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তারা সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও তারা মনে করেন।

জ্বালানি সংকট, যেটা নিয়ে সব চেয়ে বেশি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে এর জন্য বৈশ্বিক কারণের পাশাপাশি আ. লীগের জোট দলের নেতারা সরকারের কিছু ভুলনীতি আছে বলে অভিযোগ করছেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতিকে তারা এর জন্য দায়ী করছেন। জোটের এই নেতাদের মতে, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি কত দিনের শেষ হবে সেটাও অনিশ্চিত। যুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তী অভিঘাত আরও ২,৩ বছর থাকতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। সংকট  কাটাতে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অপরিকল্পিত বলেও জোট নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন। চলমান এ সংকট কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘমেয়াদী ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে তারা জানান।

১৪ দল নেতারা জানান, বৈশ্বিক এ সংকটের প্রভাব কাটাতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, এর জন্য কৃষি ক্ষেত্রে সার ও সেচ ব্যবস্থার সংকট যাতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। জ্বালানি ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রসীমার গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় এবং সপ্তাহে একদিন যানবাহন(সব ধরনের) চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলছেন তারা। জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমাতে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা দরকার বলে তারা মনে করেন। স্বল্পআয়ের মানুষের যাতে খাদ্য সংকট না হয় সেজন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর করার দাবি করছেন ১৪ দলের এই নেতারা। তারা বলছেন, এতদিন সরকার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলে আসছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে বলা হচ্ছে৷ সে অনুযায়ী এত দ্রুত সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয়।

সব বিষয়ে সঠিক তথ্য থাকা দরকার বলে জোট নেতারা মনে করেন। বিদেশে কর্মরতদের কাছ থেকে একটা বড় অংকের রেমিট্যান্স আসে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটার ওপর বেশি নির্ভর করা যাবে না কারণ সব দেশেই মন্দার প্রভাব রয়েছে৷ বৈদেশিক আয়ের ক্ষেত্রে রফতানির ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে ১৪ দলের নেতারা জানান৷ইতোমধ্যে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি এ পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে সংকট কাটিযে ওঠা যাবে বলে তারা জানান।

সংকট নিয়ে জানতে চাওয়া হলে ১৪ দলের অন্যতম নেতা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, সারা বিশ্ব সংকট যেটা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সরকারের কিছু ভ্রান্ত নীতিও আছে। বিশেষ করে জ্বালানি নীতি। কিছু ব্যবসায়ীর স্বার্থে আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতি নেওয়া হয়েছে। তারপরও সরকার প্রথম থেকেই যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা ভালো।

সংকট উত্তরণে প্রয়োজনে যদি আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয় সেটাও নিতে হবে। কৃষিকে আরও দৃঢ় করতে হবে। রফতানি আয় যাতে বাড়ে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রবাসী রেমিট্যান্সের ওপর বেশি নির্ভর করা যাবে না কারণ অন্যান্য দেশেও তো চলমান সংকটের প্রভাব পড়বে। এজন্য আমাদের আরও সাশ্রয়ী, আরও উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। জ্বালানি তেল রেশনিং ব্যবস্থার মধ্যে আনা দরকার।  

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো ভালো। শিল্প, কল কারখানা চালু রাখা, আমদানি কমানো এগুলো বাস্তব সন্মত। আমরা মনে করি পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে সংকট কাটিযে ওঠা যাবে। এছাড়া সরকার যে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলছে সেটাও সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।

ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এই সংকট মোকাবিলায় কার্যকর আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। যুদ্ধ কতদিন চলে ঠিক নাই। দীর্ঘ মেয়াদিও হতে পারে। সরকার বলে আসছে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু আবার এখন খাদ্য আমদানির কথা আসছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে দোশ অনেক এগিয়েছে বলা হয়, কিন্তু এখন বিদ্যুৎ নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে৷যে পরিমাণ চাল প্রয়োজন তা আগে থেকে মজুদ রাখতে হবে। সব কিছুর সঠিক তথ্য থাকা দরকার তাহলে অসুবিধা হবে না ৷ কৃষি ক্ষেত্রে সার, সেচের যাতে সংকট না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পিত ব্যবস্থা নিতে হবে, সরকার এখনো যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা অপরিকল্পিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এসকে/এসআইএস   
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।