গাছের মূল বা শিকড়ের কথা

ইমরুল ইউসুফ, ইচ্ছেঘুড়ি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২

পৃথিবীতে আছে লক্ষ লক্ষ রকমের উদ্ভিদ বা গাছ। গাছ কোথায় নেই। পাহাড় পর্বতের শিখর, সাগরের তলদেশ সবখানেই বিচিত্রসব গাছের দেখা মেলে। এমনকি জীবদেহের ভেতরেও গাছ জন্মে। কোনো গাছ অনেক মোটা। কোনো গাছ চিকন। কোনো গাছ এত উঁচু যে তলায় দাঁড়িয়ে ঘাড় বাঁকিয়েও তাদের চূড়া দেখা যায় না। আবার কোনোটি এত ছোট যে সবসময় পড়ে থাকে পায়ের তলায়।

এর চেয়েও ছোট গাছ আছে। যেগুলো আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। সেসব গাছ দেখতে হয় অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে। কোনো গাছে মিষ্টি ফল হয়। কোনো গাছে হয় নানা রঙের সুগন্ধি ফুল। কোনো গাছে থাকে গা ভর্তি কাঁটা।

কোনো গাছ আবার সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মাটিতে লতিয়ে লতিয়ে থাকে। কিংবা অন্য কোনো গাছকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। কোনো গাছের পাতা সবুজ। কোনো গাছের পাতা আবার এত সবুজ যে মনে হয় কালো। তবে গাছ মোটা, চিকন, উঁচু, নিচু, লতাপাতাযুক্ত কিংবা পাতামুক্ত যাই হোক না কেন প্রায় সব গাছেই থাকে কম-বেশি শিকড় বা মূল।

শিকড় বা মূলের মূল কথা
গাছে থাকে ছোট বড় অনেক শিকড়। ছোট বড় অসংখ্য শিকড় মাটির তলায় অনেকখানি নেমে গিয়ে মাটির ওপর গাছকে খাড়া করে রাখে। এর মধ্যে থাকে প্রধান একটি মূল বা শিকড়। এই মূল থেকে ছোট ছোট অনেক শিকড় বের হয়। শিকড় ছোট বা বড় যাই হোক না কেন মাটি থেকে গাছের জন্য খাদ্যরস সংগ্রহ করে। গাছের তৈরি খাবার শিকড় সঞ্চয় করে রাখে ভবিষ্যতের জন্য। কোনো কোনো গাছের শিকড় এতটাই খাবার সংগ্রহ করে রাখে যে শিকড়ের খুব চেনা চেহারাটা তখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন: মূলা, গাজর, শালগম, মিষ্টি আলু, শতমূলী প্রভৃতি। এরা মূলত গাছ থেকে খাবার সংগ্রহ করে মোটা হয়।

মূল বা শিকড়ের কাজ
শিকড়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ টেনে কাণ্ডের মধ্য দিয়ে পাতায় পৌঁছে দেয়া। কচি মূলের আগার একটু পিছনে জন্মায় মূলরোম। এই মূলরোমই মাটি থেকে খাবার সংগ্রহ করে। শিকড় দিয়ে টানা রস কীভাবে লম্বা লম্বা গাছের ডগায় পৌঁছে যায় সেটি সত্যিই বিচিত্র।

শিকড়ের নানা ধরন
মাটির নিচের শিকড় ছাড়াও মাটির ওপরেও শিকড় দেখা যায়। এ শিকড়গুলো বের হয় উদ্ভিদের পাতা, কাণ্ড বা অন্যসব জায়গা থেকে। তোমরা দেখবে কেয়া গাছের তলার দিকে থাকে লম্বা বাঁকা শিকড়। বট বা অশ্বথ গাছের যে ঝুরি, মিষ্টি আলু, পান গাছের কাণ্ড থেকেও বের হয় চিকন লম্বা শিকড়। বিভিন্ন ধরনের অর্কিডেরও শিকড় থাকে। সুন্দরবন অঞ্চলের লবণাক্ত মাটিতে দেখা যায় আগা সরু এক ধরনের মূল। এ মূলগুলো পানির ওপর মাথা তুলে থাকে। মূলগুলো সুন্দরী আর গরান গাছের। এই মূল দিয়ে সুন্দরী এবং গরান গাছ শ্বাস নেয়। এজন্য এদের বলা হয় শ্বাসমূল।

মূল বা শিকড়ের শ্রেণীবিভাগ
মূল বা শিকড়কে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো: ভাজক অঞ্চল, দীর্ঘায়ন অঞ্চল এবং পরিস্ফুরণ অঞ্চল। ভাজক অঞ্চল মূলের এ অঞ্চলের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায়। মূলের ঠিক পরেই ভাজক অঞ্চলের অবস্থান। এ অঞ্চলের কোষগুলো সবসময় বিভাজনের মাধ্যমে সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং মূলের বৃদ্ধি ঘটায়। দীর্ঘায়ন অঞ্চল ভাজক অঞ্চলের পরেই থাকে দীর্ঘায়ন অঞ্চল। এখানে ভাজক অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া নতুন কোষগুলোর প্রাচীর লম্বালম্বিভাবে বৃদ্ধি পেয়ে পরিণত আকার লাভ করে। এ জন্য কোষকে অতিরিক্ত প্রাচীর ও প্লাজমামেমব্রেন গঠনের বস্তু যেমন: সেলুলোজ, প্রোটিন, লিপিড প্রভৃতি উৎপন্ন করতে হয়। তবে কোষের সাইটোপ্লাজমের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষগুলোতে বড় গহ্বর বিশিষ্ট ভ্যাকুওল সৃষ্টি হয়। পরিস্ফুরণ অঞ্চল পরিস্ফুরণ অঞ্চল দীর্ঘায়ন অঞ্চল থেকেই মূলের শাখাপ্রশাখা জন্মায়।

শিকড়ের ভেতরের চেহারা
একটি শিকড়ের বাইরের দিকে থাকে একসারি ছোট ছোট ইটের মতো কোষ। এর নাম এপিব্লেমা। এপিব্লেমার মাঝে মাঝে থাকে এককোষী মূলরোম। মূলরোমের তলায় ফাঁকে ফাঁকে থাকে কয়েক সারি গোলাকার কোষ। এ কোষগুলো নাম কর্টেক্স। এই কর্টেক্সেই জমা থাকে শিকড়ের সব খাবার। কর্টেক্সের শেষে থাকে এন্ডোডার্মিস ও পেরিসাইকল। শিকড়ের ঠিক মাঝের অংশেও থাকে অনেক কোষ। এই কোষগুলোকে বলে জাইলেম। জাইলেমের মধ্যের নল বেয়েই রস উঠে যায় ওপরে। জাইলেমের সঙ্গেই পর্যায়ক্রমে আর এক ধরনের কোষসমষ্টি থাকে, যার নাম ফ্লোয়েম। ফ্লোয়েমের কাজ হলো সূর্যের আলোর সাহায্যে পাতায় যে খাবার তৈরি হয় সেই খাবার নিচের দিকে নামিয়ে আনা। জাইলেম ও ফ্লোয়েম কোষগুলোই গাছের সব খাবার বহন করে। গাছকে সুস্থ সবল রাখে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
এসআই


সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান