
আদিতমারী (লালমনিরহাট) : এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ লালমনিরহাট বিমান বন্দরটি চার যুগেরও বেশি সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এটি সংস্কার করে চালু করলে পাল্টে যাবে উত্তরাঞ্চলের দৃশ্যপট।
এতে যেমন ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এ অঞ্চলের মানুষ। একইসঙ্গে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়ও।
বিমান বন্দরটি ব্যবহার হলে ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘিত হবে- এ ইস্যুতে এটি বন্ধ রয়েছে। একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে এ সঙ্কট উত্তরণ সম্ভব। এজন্য জেলাবাসী প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৩১ সালে তৎকালীন বৃটিশ সরকার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি এলাকায় ১ হাজার ১৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে রেলযোগে বড় বড় পাথর, বোল্ডার ও অন্যান্য সামগ্রী এনে দ্রুতগতিতে চলতে থাকে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রানওয়ে ও অবকাঠামো নির্মাণকাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এ বিমান ঘাঁিটই ছিল মিত্র বাহিনীর একমাত্র ভরসাস্থল।
১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নতুন করে ব্যবহার না হওয়ায় জৌলুস হারিয়ে যেতে থাকে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এ বিমান বন্দরটির। তবে ১৯৫৮ সালে স্বল্প পরিসরে বিমান সার্ভিস চালু হয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। একারণে ৪ কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়ে এগুলো সবই এখন পত্যিক্ত।
পক্ষান্তরে ১৯৮৩ সালে বিমান বাহিনী কর্তৃপক্ষ এখানে কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করে। সরকারি মূল্যবান স্থাপনা জুড়ে মিলিটারি ফার্মের তত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর খামার। সংরক্ষিত ভূমিতে চলছে কৃষি কাজ।
এদিকে বিমান বন্দরটি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ভূটানের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রী লিয়নপো নন্দলাল রাজ ও বাংলাদেশের সাবেক বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী জিএম কাদের গত বছরের মে মাসে লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেন।
বিমান বন্দরটি ব্যবহারের উপযোগী হলেও শুধুমাত্র ভারতীয় আকাশসীমা লংঘনের অজুহাতে অবহেলায় পড়ে রয়েছে এটি।
লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, বিমান বন্দরটি চালু হলে এলাকার উন্নয়ন অনেকাংশে ত্বরান্বিত হবে।
এফবিসিসিআই’র পরিচালক ও আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে লালমনিরহাট ৩ আসনের সাংসদ বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাংলানিউজকে বলেন, ভূটান সরকার বিমানবন্দরটি ব্যবহারের জন্য পছন্দ করেছিল। আকাশসীমা নিয়ে জটিলতা থাকায় ভারত, বাংলাদেশ ও ভূটানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হলেই বন্দরটি ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১২
সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর