বিলজুড়ে শাপলা ফুলের বাহার

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:০৫, মার্চ ৯, ২০২৩
বিলে লাল শাপলা ফুলের বাহার। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

বিলে লাল শাপলা ফুলের বাহার। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: চা বাগানে বসন্ত ভোরের হিমেল স্নিগ্ধতা। সেই সঙ্গে কুয়াশার পরশ। সূর্যের উত্তাপটুকু বাড়তে না বড়তে পাখিদের কিচিরমিচির ডাক সেই প্রকৃতির মাঝে দারুণ সৌন্দর্য ছড়ায়। চা প্রকৃতির এমন অপূর্ব শোভার মাঝে আরেক বিস্ময়কর শোভা হাজারো ‘রক্তকমল’র হাসি।

ধীরে ধীরে কুয়াশার আবরণ সরে যেতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল এক অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য! বিলজুড়ে শুধুই ফুল আর ফুল। এ ফুলের নাম শাপলা। তবে রক্ত কমল নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nymphaea rubra.

ফিনলে চা কোম্পানির একটি বাগানে এই ফুলের সৌন্দর্য জানান দিচ্ছে প্রকৃতি থেকে তার গুরুত্ব এখনো হারিয়ে যায়নি। চা বাগানের জনহীন এই বিলপ্রকৃতির অপরূপ রূপে সেজেছে। বিলের চারদিকে সবুজ আর মাঝখানে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত লাল শাপলায় ঘেরা। বিলের মাঝে লাল গালিচায় উপভোগ্য এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। 

এ বিলে লাল রঙের শাপলা ফুলের বাহার। পানির মধ্যে লাল শাপলা আর ওপারের টিলা-সবমিলিয়ে প্রকৃতির এক নয়নাভিরাম চিত্র। তবে চা বাগান এলাকায় হওয়ায় সর্বসাধারণে প্রবেশাধিকার এখানে নেই। কেউ প্রবেশ করতে গেলেও দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিয়ে থাকেন।

তবে অযত্নে, অবহেলা কৃষি জমিতে অধিক পরিমাণে কীটনাশক সার ব্যবহার করার কারণে দেশের জাতীয় ফুল শাপলা এসব জলাভূমি থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

জানা যায়, কেউ কেউ শখ করে পুকুরেও চাষ করেন। গড়ন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার সঙ্গে কিছু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। শাপলার মতো অতটা তাড়াতাড়ি এদের পাপড়িগুলো বুজে যায় না। ফলে লাল শাপলার সৌন্দর্য দীর্ঘস্থায়ী। পাতা ও বোঁটা লালচে-সবুজ। ফুল ডাবল, ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার চওড়া, পাপড়ির সংখ্যা অনেক ও লাল। রাতেই ফুটতে শুরু করে। গোলাকার ফলে ছোট ছোট অসংখ্য বীজ থাকে। বীজ খাওয়ার উপযোগী।

চা শ্রমিক লক্ষ্মণ হাজরা বলেন, ‘এই ফুলের সৌন্দর্য দেখতে শহর থেকে আসা স্থানীয়রা ভিড় জমান। তবে আমাদের কাজে এটি অভ্যস্ত হয়ে হয়েছে। সকাল-দুপুর-বিকাল সব সময় এদিকে এলেই দেখতে পারি।  

বর্ষার মৌসুমে চা বাগানের কিছু কিছু নিচু এলাকার পানি জমে ছোট ছোট খাল-বিল ও জলাশয়ে পরিণত হয়। আর ঠিক এ সময় প্রাকৃতিকভাবে সেখানে জন্ম নেয় শাপলা। বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির শাপলার মধ্যে এখানে শুধুই লাল শাপলা দেখাই যায়। অভিযোগ রয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন, চা বাগানের কীটনাশক ব্যবহার, বিল-জলাশয়কে নিজেদের স্বার্থের ক্ষয়ক্ষতিমূলক মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার প্রভৃতির কারণে চা বাগানের পরিত্যক্ত জলাভূমি থেকে জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিলে অথবা নিচু জমির পানিতে যেদিকে তাকানো যেত চোখ পড়লে বিভিন্ন বাহারি রঙের শাপলা ফুল দেখা যেতো। এর বাহারি রূপ দেখে সবার নয়ন জুড়িয়ে যেত। এখন আর তা দেখা যায় না।

পরিবেশকর্মী অসীম প্রত্যয় বলেন, শাপলাকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ একদিকে এটি আমাদের জাতীয় ফুল। অন্যদিকে শাপলাকে সবজি হিসেবে অনেকেই খাদ্য তালিকায় ব্যবহার করে থাকেন। সব ধরনের ফল, ফুল ও কৃষি চাষাবাদ সম্পর্কে কৃষি অফিসগুলো পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু শাপলাফুল সম্পর্কে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয় না। সে কারণে এলাকায় এটি কিভাবে সংরক্ষণ করে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা কেউ জানে না। এজন্য কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

‘ফুলের ডাঁটাগুলো সুস্বাদু তরকারি। ডাল দিয়ে রান্না করলে শাপলা ফুলের ডাঁটা খেতে খুব মজা হয়। শাপলার ফুল, শাপলার মূল ও ডাঁটা এক ধরনের ভেষজগুণসম্পন্ন ওষুধি উদ্ভিদ এবং সবজিমূলক খাবার। পুকুর-বিল-জলাশয়ে মাছ চাষ করতে গিয়ে প্রতি বছর এগুলো পানি সেচে শুকিয়ে ফেলা হয়। এতে রোদের তাপে তলা শুকিয়ে শাপলা ফুলের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এসব কারণে এই ফুলের সহজপ্রাপ্তিতা হারিয়ে যাচ্ছে। ফুল এখন আর আগের মতো দেখা যায় না।’

শাপলাকে সরকারিভাবে জাতীয় ফুল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় এ ফুলকে শিক্ষার্থীদের দেখানোর জন্য শহর ও গ্রাম সংলগ্ন কিছু কিছু পুকুর-দীঘিতে, বিশেষ করে সরকারি খাস জায়গায় সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মনোমুগ্ধকর এ ফুলের চাষাবাদ করা হলে সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য দুটোই রক্ষা হতে পারে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
বিবিবি/এএটি


সম্পাদক : লুৎফর রহমান হিমেল

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান