
বরিশাল: ইলিশের নিরাপদ প্রজনন ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ১২ অক্টোবর থেকে চলছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ইলিশের এই প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণে জলে-স্থলে চলছে চলছে প্রশাসনিক তৎপরতা। তবে শত অভিযানেও থেমে নেই ইলিশ শিকার ও বিক্রি।
যদিও মৎস্য বিভাগ বলছে, জেলেদের বড় অংশই নিষেধাজ্ঞা মানছেন। তবে সমাজের সব ধরনের মানুষ সচেতন না হলে লুকিয়ে ইলিশ শিকার বন্ধ হবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দিষ্ট বাজার বা অবতরণকেন্দ্রগুলো বাদ দিয়ে বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জায়গাতে এ নিষেধাজ্ঞার সময়ও ইলিশ কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী ওই সব জায়গা থেকে মধ্যরাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। যদিও বরিশাল নগরে বেশ কিছু কলোনি এলাকায় এসব মাছ প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এ সময়টাতে কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যায় বলে এসব মাছের প্রতি সব মানুষের আগ্রহ আছে। তাই কৌশলে এসব মাছ বেচা-বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার বাসিন্দা আবু বকর জানান, প্রতিদিন ভোরে শহরতলীর তালতলী সংলগ্ন নদী তীরের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ মাছ কিনতে পাওয়া যায়। গত বুধবার তিনি সেখান থেকেই জাটকা সাইজের ইলিশ ৪৫০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আল-আমিন জানান, নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর প্রতিদিন ভোরে কীর্তনখোলা নদীর পূর্বপ্রান্তের হিরণ নগরে ইলিশ বিক্রি হয়। কিছুটা কম দামে মাছ পাওয়া যাওয়ায় অনেকে দূর থেকে মোটরসাইকেলে এসেও ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে যান।
শহরের মধ্যে ভ্যানে কৌশলে ইলিশ বিক্রির কথা জানিয়েছেন আলেকান্দা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে কেডিসি এলাকা থেকে কামরুজ্জামান নামে এক যুবক প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে বা পরে ছোট ছোট ইলিশ বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় এসব ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি করছেন তিনি।
ইলিশ বিক্রেতা কামরুজ্জামান জানান, ট্রলারে করে মাছ দিয়ে যাওয়া হয় তাকে। যে কোনো সময় পুলিশ ধরতে পারে জেনে ককশিটের ভেতর ইলিশ রেখে, সেগুলো প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, শুধু যে অসাধুরা ইলিশ কেনা-বেচার সাথে জড়িত এমনটা নয়। অনেক ভালো মানুষও ইলিশ কিনছেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে কম টাকায় এ সময়টাতে ইলিশ পাওয়া যায়, এমন চিন্তা করেন তারা। তবে দেশের সব মানুষ যদি সচেতন না হয়, তবে অনেক কিছুই সম্ভব নয়। মানুষ নিষেধাজ্ঞার সময় যদি ইলিশ না খায়, তাহলে এর চাহিদা থাকবে না। আর চাহিদা না থাকলে মাছ কেউ কিনবে না, তখন শিকারও বন্ধ হয়ে যাবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণের উদ্যোগ শুরুর দিকের মতো পরিস্থিতি এখন নেই। এখন জেলেরাই সচেতন, নদীতে নামছেন না তারা। বরিশাল জেলায় ৮৫ হাজারের মতো জেলে রয়েছে, তারা যদি সবাই নদীতে নামতো তাহলে অবস্থা কী হতো? এখন যারা নামছে তারা মুষ্টিমেয় কিছু লোক। তবে সচেতন হলে আর সবার সহযোগিতা পেলে এটাও রোধ করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ