ঢাকা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী) বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করেছেন রায় ঘোষণাকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।
৩৪২ পৃষ্ঠার এ রায়ে বৃহস্পতিবার তিনি সই করেছেন বলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম বিকেলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ওই রায়ে সই করেছেন। এখন ওই রায়ে আপিল বিভাগে ওই সময় যারা ছিলেন তারা সবাই সই করলে এটি প্রকাশ করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের ছুটি শেষে এটি প্রকাশ হতে পারে বলেও তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১০ মে এ রায় দেওয়ার সময় এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার সংক্ষিপ্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছিল আপিল বিভাগ। তবে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আরো দুই দফা (টার্ম) এ ব্যবস্থা বহাল রাখার কথা বলা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় আসার আগেই এ রায় বাস্তবায়ন হয়ে যায়। একই বছরের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় সংসদে। রায়ের কপি প্রকাশের আগেই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ওই রায়ে বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে আপিল মঞ্জুর করা হলো। সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন, ১৯৯৬ (আইন-১: ১৯৯৬) এখন থেকে বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হলো।
দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন উল্লিখিত সংশোধনীর অধীনে হতে পারে। কারণ আইনের বহু পুরোনো নীতির কোনো কিছু বেআইনি হলেও প্রয়োজনের তাগিদে তা আইনসম্মত। রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তাই হচ্ছে সর্বোচ্চ আইন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নিয়োগের বিধান বাতিলে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে সংসদের স্বাধীনতা রয়েছে।
যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা:
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়। এ ব্যবস্থা ১৯৯৬ সালের ২৮শে মার্চ রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায়। এর আগে ষষ্ঠ সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গৃহীত হয়। এরপর সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ ব্যবস্থার অধীনে হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে অ্যাডভোকেট এম. সলিমউল্যাহ, রুহুল কুদ্দুস ও মো. আবদুল মান্নান খান হাইকোর্টে একটি রিট করেন। হাইকোর্টে তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চে রিটের শুনানি হয়। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ বলে রায় দেয়।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ। এ সংশোধনী সংবিধানের কোন মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।
পরে রিট আবেদনকারীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান। আপিল বিভাগ এ মামলায় এমিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের বিশিষ্ট আট জন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন।
তাদের কাছে আদালতের প্রশ্ন ছিলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বিচার বিভাগ পৃথককরণের পরিপন্থি কিনা? আট এমিকাস কিউরির মধ্যে সাতজনই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার পক্ষে আদালতে অভিমত দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩,২০১২
এমইএস/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]